হিন্দু নববর্ষ এবং বাংলা নববর্ষ দুটি ভিন্ন বিষয়
প্রতিবছর চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে হিন্দুদের নতুন বছর শুরু হয়। এবছর হিন্দু নববর্ষ শুরু হয়েছে ৯ এপ্রিল থেকে। বিক্রম সংবত ২০৮১ এবং চৈত্র নবরাত্রি একই দিন থেকে শুরু হয়েছে।
ভারতীয় সম্রাট বিক্রমাদিত্য এই উৎসব শুরু করেছিলেন বলে এর নাম বিক্রম সংবত। সংবত অর্থাৎ সাল। বিক্রম সংবত প্রতিবছর নতুন নামে শুরু হয়। এছর এর নাম রাখা হয়েছে পিঙ্গল। বিক্রমাদিত্য শকদের পরাজিত করে ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই বিক্রম সংবতের প্রচল করেন। মনে করা হয় চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে শুভসময় এ নববর্ষ শুরু হয়েছিল।
ভারতীয় কালগণনা প্রকৃতিদেবীর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। বসন্ত ঋতু প্রকৃতিক কারণে নবজীবনের বার্তা বয়ে আনে। এই সময় প্রকৃতিও নবরূপ ধারণ করে। তাই এই দিনটি সমগ্র মানবজাতির নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র ভারতে এই উৎসবটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। গুড়ি পাডওয়া, চেতিচাঁদ, যুগাদি, নব সংবতস ইত্যাদি নামেও এই উৎসবটি পালিত হয়। হিন্দু নববর্ষের ১২ মাসের প্রত্যেকটিতে রয়েছে নিজস্ব বিশেষ তাৎপর্য। বঙ্গাব্দের ১২ মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলের চন্দ্রে আবর্তনের বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে বৈশাখ। জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নামানুসারে জৈষ্ঠ্য। উত্তর ও পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রের নামানুসারে আষাঢ়। শ্রাবণা নক্ষত্রের নামানুসারে শ্রাবণ। উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নামানুসারে ভাদ্র। অশ্বিনী নক্ষত্রের নামানুসারে আশ্বিন। কৃত্তিকা নক্ষত্রের নামানুসারে কার্তিক। মৃগশিরা নক্ষত্রের নামানুসারে অগ্রহায়ণ। পুষ্যা নক্ষত্রের নামানুসারে পৌষ। মঘা নক্ষত্রের নামানুসারে মাঘ। উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নামানুসারে ফাল্গুন। চিত্রা নক্ষত্রের নামানুসারে চৈত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ “সূর্যসিদ্ধান্ত” থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে।
সৌর রাজ্যে প্রতি নতুন বছরে একজন অধিপতি হয়ে থাকেন। জ্যোতিষশাস্ত্রীয় গণনা অনুসারে হিন্দু নববর্ষের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত একজনকে অধিপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই ধারাবাহিতায় ৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া নববিক্রম সংবত ২০৮১ ক্রোধী নামে পরিচিত। অর্থাৎ এ বছর সংবতের রাজা হবেন মঙ্গল আর মন্ত্রী হবেন শনি।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি বিশ্বাস আছে যে, ব্রহ্মপুরাণ মতে, এই দিনেই প্রজাপতি ব্রহ্মা জগৎ সৃষ্টি করেন। তাই পৃথিবীতে এটি কাল গণনার প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তীতে দ্বাপর যুগে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের শেষে যে যুগাব্দ গণনা শুরু হয়েছিল তাও এই দিনটি থেকেই। এবার শুরু হতে চলেছে ৫১২৬ যুগাব্দ। আবার উজ্জয়িনীর সম্রাট অত্যাচারী শকদের পরাজিত ও বিতাড়িত করে শকারি বিক্রমাদিত্য উপাধি গ্রহণ করেন। সেই উৎসবকে মনে রাখার জন্য নতুন করে গণনা করা হয় বিক্রম সংবদ। এবছর বিক্রমাব্দ বা বিক্রম সংবদের ২০৮১ সূচনা হয়েছে। চৈত্র নবরাত্রি দ্বিতীয় সর্বাধিক উদযাপিত নবরাত্রি। এটি বসন্ত নবরাত্রি নামেও পরিচিত। চৈত্র মাসের শুক্লা পক্ষের প্রতিপাদ তিথি থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত দেবী দুর্গার নয়টি রূপ, নয়দিনে পূজা করা হয়। এসময় দুর্গা পূজাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। ত্রেতা যুগে বসন্ত নবমীতে অযোধ্যায় দশরথ পুত্র শ্রী রামচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এটি রাম নবমী নামেও বেশ পরিচিত। এছাড়া চৈত্র মাসের প্রতিপদ তিথিতে যুধিষ্ঠির রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। তাই মহাভারতের মতে এটি চৈত্র নবরাত্রি নামে পরিচিত। হিন্দু নববর্ষ পালনের সূচনা করা হয় সূর্য ও দেবী দুর্গার পুজো করে। যাতে সারা বছর সৌর্য-বীর্যে বলশালী হয় রাজ্য এবং মহা সুখে থাকে প্রজাগণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাংলা বর্ষবরণ