চটকদার প্রকল্প গ্রহণ থেকে সরে আসা উচিত

www.ajkerpatrika.com ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৩

৩ এপ্রিল পত্রপত্রিকায় দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের জন্য রাশিয়ার রোসাটমের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর এহেন আসক্তি খুবই দুঃখজনক। তিনি এ ব্যাপারে বারবার বঙ্গবন্ধুর আগ্রহের কথা জানিয়ে থাকেন, কিন্তু সোলার পাওয়ারের কথা জানা থাকলে নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু এই পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতেন বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বাংলাদেশে এক দশকে অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হয়েছে, কিংবা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যেগুলোর কয়েকটিকে স্বল্পপ্রয়োজনীয় অথবা অপ্রয়োজনীয় বলা চলে। চলমান প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর এবং পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন বিআরটি প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পের নিকৃষ্ট উদাহরণ। রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণসহ মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে নির্মাণাধীন রূপপুর প্রকল্প থেকে ২০২৫ সালে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বলে বলা হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, রাশিয়া ভারতে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটির পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে দিয়েছে মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। অতএব, প্রশ্ন করা যৌক্তিক যে বাংলাদেশ কেন এত বেশি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য চুক্তি করেছে?


বর্তমান সরকার যে জনগণের কাছে জবাবদিহির ধার ধারে না, এর উদাহরণ এই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প প্রযুক্তি বিশ্বে রয়েছে, যেখানে রূপপুর প্রকল্পের অর্ধেক ব্যয়ে ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এই মহাবিপজ্জনক পারমাণবিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মাঝখানে স্থাপনকে আমি সমর্থন করিনি। সোলার পাওয়ার প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যয় রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকও হতো না। অথচ, সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, এক ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইতিমধ্যেই গণচীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১৭ নভেম্বর ২০২৩ একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ব্লুমবার্গের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ২০২৫ সালের পর সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্য সব বিকল্পের তুলনায় বাংলাদেশেও কমে আসবে। ২০৩০ সালে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হবে মাত্র ৪২ ডলার, যেখানে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে পড়বে ৯৪ ডলার এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৮ ডলার।


তাহলে এত ব্যয়বহুল ‘সাদা হাতি’ প্রকল্প আমরা কেন নিলাম? এই ঋণ পরিশোধে ২০ বছর সময় লাগবে বলে সরকারিভাবেই জানানো হচ্ছে, কিন্তু ২০২৫ সাল থেকে প্রতি কিস্তিতে বাংলাদেশকে সুদাসলে প্রতিবছর ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। (২০২৩ সাল থেকে রাশিয়ান ঋণের ৩৩০ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে)। এহেন ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পগুলো যে ইতিমধ্যেই দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়। এখন যদি রূপপুর দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গৃহীত হয়, তাহলে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে দেশের বৈদেশিক ঋণে।


গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব জাহাঙ্গীর আলম চলমান বিআরটি প্রকল্পটি যে ৫০ বছর ধরে গাজীপুরের জনগণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করবে, সে সত্য কথাটি উচ্চারণ করেছেন, এ জন্য তাঁকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। আসলেই এই বিআরটি প্রকল্প ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত সম্ভাব্য একটি আট লেনের মহাসড়ককে মারাত্মকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে, জাতি যার কুফল ভোগ করবে যুগের পর যুগ ধরে। বিমানবন্দর পর্যন্ত এয়ারপোর্ট রোডটি আট লেনের মহাসড়ক, কিন্তু এরপর বিআরটি প্রকল্পের জন্য এই সড়কের তিন থেকে চারটি লেনকে মহাসড়ক থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। আবার মাঝে মাঝে অনেক ফ্লাইওভারও নির্মাণ করা হয়েছে প্রকল্পের অধীনে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কের মাঝখানের সবচেয়ে বেশি ব্যবহারোপযোগী তিন-চারটি লেনকে বিআরটি প্রকল্পে ‘স্পেশাল বাস’ ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের জন্য নিষিদ্ধ জোনে পরিণত করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ওই সব স্পেশাল বাসে কতজন মানুষ চলাচল করবে আর প্রকল্পের কারণে বাদ হয়ে যাওয়া তিন-চার লেনে এর কত গুণ মানুষ চলাচল করতে পারত! এই প্রকল্পের ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ৪ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রকল্পের খরচ ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বিআরটি প্রকল্পের ধারণা বেরিয়ে এসেছিল, জানি না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও