অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখানোর সেকেলে প্রবণতা

দেশ রূপান্তর মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৪, ১১:৩১

উন্নয়ন অর্থনীতিতে গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট ওরফে জিডিপি একটি বহুল উচ্চারিত ও উৎকলিত শব্দ সমষ্টি কেবল নন্দিতই নয়, বিনম্র শ্রদ্ধারও পাত্র। আগে ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদনে ‘বিনম্রতার’ উপস্থিতি ছিল না মনে করেই ইদানীং অনেক কিছুতেই ‘বিনম্র’ শব্দ জুড়ে দেওয়ার চল চালু হয়েছে। ব্যাপারটাকে অতিভক্তি চোরের লক্ষণ বলে মনে হয়। মুরব্বিকে সালাম কালাম দেওয়ার মধ্যে আন্তরিকতা যখন থেকে কমা শুরু করল, তখন বিনম্রতা বাড়ানোর পথ রচনার সূত্রপাত। অন্যদিকে সদাচার, শুদ্ধাচার, সুশাসন শব্দাবলি বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই তাদের ফিরিয়ে আনার সবক দিতে হচ্ছে শুদ্ধাচারের পদক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে সুশীল সেবকদের। রুলস অব বিজনেসে কার কী কাজ ও ভূমিকার কথা বলা আছে; তারপরও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা ও সম্পাদনা চুক্তি করতে হচ্ছে। সিটিজেন চার্টার জারি করেও জনসেবা-পরিষেবার তালিকা জানান দিতে হচ্ছে।


জিডিপি উন্নয়নের নিরীহ মাপকাঠিতে ব্যক্তি মানুষকে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় দেখানোর প্রয়াস শুরু হওয়ায় মানুষের উন্নতি-‘উন্নয়ন’-এর পদাবলি সাব্যস্তকরণের দিকে ঝুঁকছে। ফলে ব্যক্তি মানুষ যেমনই থাক, আর সেখানে জিডিপির অঙ্ক না পৌঁছালেও এমন অনেকে আছেন যাদের আয়-রোজগার আবার জিডিপির আকার অবয়বের যোগফলের চেয়ে বেশি তারা নিজেদের সম্মান আর স্থায়ীত্বের দাবি করতে কসুর করেন না।


‘উন্নয়নের’ শনৈ শনৈ অগ্রগতির রোল মডেলের মতো মেডেল প্রাপ্তির জন্য সাধারণ মানুষ যত্রতত্র ব্যবহৃত হচ্ছি। নেতিবাদীরা আমার এহেন অপব্যবহারে কিংবা অ-উন্নতি (কোনো সম্মানীয় পদবির আগে ‘ভুয়া’ শব্দের পরিবর্তে অ-প্রত্যয় যোগের সদয় নির্দেশনা যেমন দেওয়া হয়) দেখে বিষাদে আপতিত হতে পারেন। তবে ইতিবাদীরা যেন আমার প্রতি আস্থাশীল হচ্ছেন অবিরত। বিশেষজ্ঞ পদবিধারীদের নেতিবাদীরা সমাসের উপধারা উল্লেখ করে ‘বিশেষভাবে অজ্ঞ’ কিংবা ‘অতিরিক্ত’ পদবিধারীদের নিম্নমানের চেয়ার-টেবিল দেওয়া দেখে অতি মাত্রায় রিক্ত (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস) বলে ভাবতে থাকে। নেতিবাদীদের কাছে শুধু আমার কেন কারোরই কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ে না। তাদের চোখে ছানি পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু তা পরিষ্কার করার ওষুধে যে ভেজাল, প্রক্রিয়ায় (প্রসিডিউর) বিভ্রান্তি এবং প্রয়োগকারীদের রামকানাইয়ের মতো নির্বোধ মনে হয়। আর হবেই বা না কেন, ইতিবাদীদের অতি প্রচার ও অপ্রতিরোধ্য সাফল্যের ধাঁধায় নেতিবাদীদের চোখ কচলানি বাড়ছে বৈকি। ফলে এত উন্নতি তাদের চোখে দাঁড়াতেই পারে না। ইতিবাচক চশমার পাওয়ার বাড়ছে, ফ্যাকো মেশিনে তার রূপ ধরা পড়ছে। উন্নয়ন এখন উচ্চকণ্ঠ হতে পারছে। উন্নয়নের নাম ভাঙিয়ে যে কোনো পদ, পথ পাওয়ার রাস্তা বেরিয়ে আসছে।


জিডিপি আগে এতটা সমাদর ও সুনজরে আসার অবকাশ পায়নি। যখন বিদেশি ঋণ অনুদান নিয়ে উন্নয়ন এমন কি অনুন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন চলত তখন জিডিপি ছিল অতি নগণ্য। কিন্তু যখন থেকে নিজেদের অর্থায়নের সক্ষমতা একটু একটু করে বাড়তে শুরু করল, যখন নিজের সুস্বাস্থ্য শক্তি ও সামর্থ্য দেখানোর প্রশ্নকে সামনে আনা হলো তখন থেকে জিডিপির বহুল ব্যবহার শুরু হয়ে গেল। জিডিপিই হয়ে গেল উন্নয়নের মাপকাঠি। এখন সবাই জিডিপি ব্যবহার করে উন্নয়ন অর্থনীতির উথাল-পাথাল অবস্থা ঠাওর করানোর ক্ষেত্রে। একে স্পষ্টীকরণের জন্য বছর বছর গ্রোথ অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার দেখানো শুরু হয়ে গেল। জিডিপি যথাযথ হিসাবায়িত হলো কিনা সেদিকে না তাকিয়ে বছর থেকে বছরে আমার ঊর্ধ্ব-অধগতির শতকরা কিংবা অনুপাতে তারতম্য দেখানোর মুন্সিয়ানার চর্চা শুরু হয়ে গেল। প্রচারসর্বস্ব কোনো কোনো উন্নয়ন অর্থনীতিতে জিডিপি হিসাবের ভিত্তি নির্মাণের নথি চালাচালি বেড়ে গেল। কাজির খাতায় দেখানো হলেও গোয়ালে গরুর হিসাব মেলানো যায় না, তা সত্ত্বেও। গোটা দেশের সব মানুষকে আমার উন্নতির গড় হিসেবে দেখার চেষ্টা চলতে থাকল। হঠাৎ করে দেখা গেল, এ সুবাদে উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে উত্তরণের পথ খুলে গেল। মাথাপিছু আয় জ্যামিতিক হারের চেয়েও বেশি বেগে বাড়তে শুরু করল। মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতিকে আয়ত্তে আনা না গেলেও, দেশের মাথাপিছু আয়ের হিসাব বাস্তবে পকেটে থিতু হওয়া অঙ্কের সঙ্গে মেলানো কঠিন হলেও, প্রচার প্রশংসায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে এটা ধরে নিয়েই উন্নয়ন অর্থনীতির বিজয় নিশান পতপত করে উড়তে শুরু করল। সাধারণ জনগণ তার পকেট ও পাতের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সামিল দেখতে না পেয়েই ‘আমার বলার কিছু ছিল না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম’ গানের মধ্যে হারিয়ে গেল।   

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও