অসম বাণিজ্য সম্পর্ক ও ক্রমবর্ধমান ভারতবিদ্বেষ বোঝাপড়া

বণিক বার্তা ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩

২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক নমিনাল ডলারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই নির্ধারণ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ ডলার, যার মানে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই এখনো বেশি হতে পারে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য মোতাবেক ক্রয়ক্ষমতার সমতা বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) ভিত্তিতে ২০২২ সালে ভারতের প্রাক্কলিত মাথাপিছু জিএনআই ৮ হাজার ২১০ পিপিপি ডলার, আর বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮৯০ পিপিপি ডলার। এর মানে, ভারতে বেশির ভাগ পণ্য ও সেবার দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম হওয়ায় ভারতের জনগণের জীবনযাত্রার মান বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানের চেয়ে উঁচু। প্রথমেই ‘পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি’ বা ‘ক্রয়ক্ষমতার সমতা’ ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করছি। বিশ্বের দেশে দেশে যেহেতু বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম কমবেশি হয় সেজন্য বিভিন্ন দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানকে তুলনীয় করার জন্য পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নমিনাল জিডিপিকে ‘পিপিপি ডলারে জিডিপি’তে রূপান্তর করা হয়। এটা একটা যুগান্তকারী গবেষণার ফসল, কিন্তু পদ্ধতিটি বেশ টেকনিক্যাল হওয়ায় সাধারণ পাঠকদের কাছে বিষয়টি জটিল মনে হবে। (কম্পিউটার প্রযুক্তি বিপ্লবের কারণেই পদ্ধতিটির প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে)। এ পদ্ধতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকশ পণ্য ও সেবার দামকে তুলনার একক হিসেবে ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে একই পণ্য ও সেবাগুলোর দাম কতখানি বেশি বা কম তার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি দেশের মুদ্রার অভ্যন্তরীণ ক্রয়ক্ষমতাকে মার্কিন ডলারের ক্রয়ক্ষমতার তুলনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। ফলে যেসব দেশে পণ্য ও সেবার দাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি সে দেশগুলোর মাথাপিছু জিডিপি কমিয়ে আনা হয় এবং যেসব দেশে পণ্য ও সেবার দাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম সে দেশগুলোর মাথাপিছু জিডিপি বাড়িয়ে দেয়া হয়। সাধারণভাবে যেসব দেশের মাথাপিছু জিডিপি কম সেসব দেশে অধিকাংশ পণ্য ও সেবার দামও তুলনামূলকভাবে কম হয়, এক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের ব্যাপারটা অনেকখানি ব্যতিক্রম। বেশির ভাগ পণ্য ও সেবার দাম বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে বেশি। খাদ্যদ্রব্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা—যেগুলোকে ‘মৌল চাহিদা’ বলা হয় সেগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পণ্য ও সেবার দাম বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে বেশি।


উল্লিখিত তুলনামূলক চিত্রের আলোকে বাংলাদেশ ও ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে উপস্থাপন করাই বক্ষ্যমাণ কলামের লক্ষ্য। সম্প্রতি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ভারত হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কিছু বাংলাদেশী মিষ্টি বিতরণ করে, পটকা ফুটিয়ে ও মিছিল করে আনন্দ প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে ভারতে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিমকে অপছন্দ করি, তাই ভারতের পরাজয়ে আমিও দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া আমাকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপনকারী ভারতীয়রা বাংলাদেশের উল্লাসকারীদের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য বিশ্বাসঘাতকতা ও অকৃতজ্ঞতা’ অভিহিত করে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে ভারতই বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছে। তাদের এমনো দাবি ছিল যে ৫২ বছর ধরে ভারতই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, ভারতের করুণা না পেলে এখনো নাকি বাংলাদেশের অর্থনীতি ধসে যাবে। এসব মূর্খতাপ্রসূত একপক্ষীয় আক্রমণ যে ধরনের মানসিকতার প্রতিফলন সেটাই সমস্যার মূল কারণ। দুঃখজনকভাবে এ মানসিকতায় আক্রান্ত ভারতের সিংহভাগ মানুষ। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে ভারতের সব প্রতিবেশী দেশের জনগণের মধ্যেই ভারতের ‘আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী দাদাগিরি’ ক্রমবর্ধমান ‘ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট’ সৃষ্টি করে চলেছে। ভারতের জন্মশত্রু পাকিস্তান ও ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী গণচীনের কথা বাদ দিলেও নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ৯৫ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও নেপালের মানুষ ভারতকে প্রচণ্ডভাবে অপছন্দ করছে, এমনকি ঘৃণা করছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পরই নেপালের জ্বালানিসহ পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ওই দেশের অর্থনীতিকে প্রায় ধসিয়ে দেয়ার বিষয়টি নেপালিরা ভোলেনি, ভবিষ্যতেও সহজে ভুলবে না। সম্প্রতি ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতি অবলম্বন করে মালদ্বীপে চীনপন্থী মোহাম্মদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। সাম্প্রতিক এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে আঞ্চলিক দাদাগিরির বিষয়টি ভারতীয়দের পরিত্যাগ করতে হবে।


কোনো বিবেকবান বাংলাদেশী কখনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের ‘ঐতিহাসিক ধাত্রীর’ ভূমিকাকে অস্বীকার করবে না। কিন্তু ‘শুধু ভারত’ বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে বললে বাংলাদেশীদের ঐতিহাসিক স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকে অবমূল্যায়ন ও অস্বীকার করা হয় না? ত্রিশ লাখ শহীদের শাহাদত এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এ দেশটা স্বাধীন হয়েছে—এ কথাটা ভারতীয়রা ভুলে যায় কেন? ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের যুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যের আত্মাহুতিকে আমি কোনোমতেই খাটো করব না, শুধু প্রশ্ন করব, ওই বছরের ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের কথা ভারতীয়রা ভুলে গেল কেন? মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের যে ঐতিহাসিক সামরিক সহযোগিতা দিয়েছে এবং প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে সেজন্য বাঙালি জাতি ভারতের সরকার ও জনগণকে আজীবন কৃতজ্ঞতা জানিয়েই যাবে। কিন্তু গত ৫২ বছরে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে সেটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া বড় ধরনের ‘মূর্খতা’ নয় কি? নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও