মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অপতথ্য রোধ, দুটোই জরুরি
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ দফায় সরকার গঠন করেছে। সরকার নতুন না হলেও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনি নতুন। আপনার মিশন বা লক্ষ্য কী?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে দেশে পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন বাস্তবতাও তৈরি হয়েছে। সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
স্বাধীন বা উন্মুক্তভাবে তথ্যের প্রবাহ আমরা চাই। সমস্যা হচ্ছে এগুলোর সঙ্গে মাঝেমধ্যে অপতথ্য ছড়ানো হয়। এ জায়গায় ভারসাম্য আনতে হবে। কারণ, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খুবই দরকার। একইভাবে মুক্ত পরিবেশের সুযোগ নিয়ে বা এর অপব্যবহার করে যারা ব্যক্তিস্বার্থে বা গোষ্ঠীস্বার্থে অপতথ্য ছড়ায় এবং এক অর্থে মানুষকে ধোঁকা দেয়, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
প্রথম আলো: অপতথ্য বা গুজব ছড়ানোর পেছনে কখনো কখনো রাজনৈতিক বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু অনেক সময় অপতথ্যের বিষয়টি বুঝে বা না বুঝে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে থাকেন; তখন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেক্ষেত্রে ঘটনার জন্য কে দায়ী হবে, সেটা কীভাবে চিহ্নিত করবেন?
আরাফাত: আপনি যদি গোড়ায় হাত দেন অর্থাৎ যে অপতথ্য তৈরি করছে তাকে চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে কে শেয়ার করছে, সেটি আর আসে না। এখানে আমি আরেকটা জিনিস স্পষ্ট করি, কাজ করতে গিয়ে ভুল করতে পারি, সেটা আমরা সবাই করি। সেগুলো অন্য বিষয়। কিন্তু ধরেন, একটা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে অপতথ্য তৈরি করে মানুষকে বোকা বানাতে চায়। সেগুলোকে আমরা ধরতে চাইছি।
প্রথম আলো: খারাপ উদ্দেশ্য আছে বা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সেটি কীভাবে নির্ণয় করা যাবে?
আরাফাত: এটা বোঝা যাবে। এ ব্যাপারে একটা স্কেল বা সীমা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। সে জন্য আমি বলছি, গত ১৫ বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যে বিস্তৃতি হয়েছে, এমনকি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যে ব্যাপ্তি হয়েছে, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সবই এখন এক হয়ে গেছে।
এখন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াও অনলাইনে যাচ্ছে। তারাও অনলাইনে টক শো করছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এই যে সবকিছু মিলে একটা পরিস্থিতি হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে যেতে প্রযুক্তি আমাদের বাধ্য করেছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) সবার মতামত আমি নিচ্ছি। তাদের মধ্যে একটি ঐকমত্য আছে যে, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন দরকার, তেমনি অপতথ্য রোধ করাও জরুরি।
প্রথম আলো: গত কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই অপতথ্য ছড়ানোর অভিযোগ বেশি এসেছে এবং এর উৎস বেশির ভাগই দেশের বাইরে।
আরাফাত: সেটারও একটা উপায় আমাদের বের করতে হবে। আমি আইনি কাঠামোর বাইরে সামাজিকভাবেই বিষয়গুলো প্রকাশ করতে চাই। কাউকে আইনের মধ্যে এনে শাস্তি বা সাজা দেওয়া, এটা চাই না। এর চেয়ে প্রকাশ করা তথ্যের গ্রহণযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। ধরেন, বারবার কেউ অসত্য তথ্য দিচ্ছে, তা বারবার চ্যালেঞ্জ করলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। যেমন বিদেশ থেকে যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন নেই। এগুলো মানুষ দেখে বিনোদনের জন্য। কিন্তু আস্থায় নেয় না। আমরা সেই জায়গায় নিতে চাই, যাতে কোথায় গেলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে, তা মানুষ বুঝতে পারবে।
প্রথম আলো: গত ১৫ বছরে একটা অভিযোগ সব সময় ছিল, দেশে মতপ্রকাশের পরিসর সংকুচিত হয়েছে, সাংবাদিকেরা ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ করছেন-এমন অভিযোগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রয়েছে। এ অভিযোগকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আরাফাত: সেলফ সেন্সরশিপের বিষয়টা একটা ন্যারেটিভ (ধারণা)। এটা তৈরি করা হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই-এটা আমি কীভাবে প্রমাণ করব? কারণ, প্রতিদিন টেলিভিশনগুলোয় সম্প্রাচারিত অনুষ্ঠানগুলোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। যখন গুণগতভাবে প্রমাণ করতে পারছে না, তখন একটা ন্যারেটিভ বা ধারণা তৈরি করছে, যেটা মাপা যায় না।
ভয় থেকে সেলফ সেন্সরশিপ করা হচ্ছে, এটা কীভাবে প্রমাণ করা যাবে? মানে যাঁরা এটা বলছেন, এটি তাদের একটা মতামত। আমি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু এখানে কোনো প্রমাণ হাজির করার সুযোগ নাই যে এ কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মত প্রকাশ
- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা