রাজনীতি নয়, রাজনীতির কলঙ্ক
ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস ও ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিএনপি সরে আসছে না। এতে শঙ্কা জাগছে, আবারও কি বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধের পথে পা বাড়াবে? বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সেই সময় টানা ২৮০ দিন অবরোধ পালন করেছিল। তখন অবরোধের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদে হরতালেরও ডাক দেওয়া হতো। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয় বিএনপি জোট। বাস্তবে এই হরতাল ও অবরোধের কার্যকারিতা দেখা না গেলেও সেই অবরোধের ২৮০ দিন অতিক্রম করলেও বিএনপি জোট আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। সহিংস আন্দোলন করেও সেই সময় কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। উল্টো বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সমালোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ইত্যাদি যেকোনো রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। সাংবিধানিক অধিকার। দলের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের গণবিরোধী কাজ ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা রকম তৎপরতা চালাতে হয়। কখনো তারা অসহযোগের মতো ‘চরম’ কর্মসূচিও গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বিএনপি এখন যা করছে, এর কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালনের নানা রকম ভিডিও পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে সীমিতসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঝটিকা মিছিল। যদিও বাস্তবে নেতা-কর্মীদের এসব ক্ষণস্থায়ী ঝটিকা মিছিল রাজপথে তেমন একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। হরতাল-অবরোধের প্রভাব যেমন ক্রমেই কমে আসছে, তেমনি নির্বাচনের দিকেও বীর বিক্রমে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হলো, এবারও যদি ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির দাবি-দাওয়া না মেনে নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে, তখন বিএনপি কী করবে? তখনো কী বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাবে? সেই আন্দোলনের পরেও পদত্যাগ না করে ক্ষমতাসীনেরা যদি নানা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাহলেও কী এভাবে অনন্তকাল আন্দোলন চলবে? বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েই যাবেন?
রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ‘হতে দেওয়া হবে না।’ ‘হতে দেওয়া হবে না’ বললেই কি নির্বাচন ঠেকানো যাবে? বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন হলে (নির্বাচন যে হবেই, তার আলামত স্পষ্ট) তাঁরা কী করবেন? আওয়ামী লীগারদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবেন? পেট্রলবোমা ছুড়বেন? রিজভী সাহেবরা ২০১৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।