বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ অনুযায়ী বিশেষায়িত ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কোনো চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ পদবি ব্যবহার করিলে চিকিৎসক হিসাবে তাহার নিবন্ধন স্থায়ীভাবে বাতিল হইবার বিধানটি অন্তত সংশ্লিষ্ট খাতের মানুষদের অজানা নহে। কিন্তু বিস্ময়কর হইলেও সত্য, সোমবার সমকালের এক সংবাদ অনুযায়ী, বিশেষায়িত ডিগ্রি ছাড়াই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হইতে এমবিবিএস পাস করা সাইদুজ্জামান উপল গত দুই বৎসর যাবৎ একদিকে নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিতেছেন, অন্যদিকে জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন পদবি ব্যবহার করিয়া রীতিমতো চেম্বার খুলিয়া রোগীদের ‘চিকিৎসা’ করিতেছেন। প্রতিবেদনমতে, জনাব উপল বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া ও নাটোরের বিভিন্ন উপজেলায় নামে-বেনামে ক্লিনিকে রোগী দেখিতেছেন; এমনকি দিনে পাঁচ হইতে ছয়টি অস্ত্রোপচার করেন। আরও বিস্ময়কর, তাহার ভুল চিকিৎসায় গত বৎসরের ১৫ জুলাই সাভারের আশুলিয়ার বাসিন্দা মিরা খাতুন মারা গিয়াছেন বলিয়া মৃতের স্বামী চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএমডিসি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিবার পরও অদ্যাবধি তিনি বহাল তবিয়তে।
অবশ্য যে দেশে ভুয়া চিকিৎসকের কর্মকাণ্ড লইয়া খবরের পর খবর হইলেও বিএমডিসি বা প্রশাসনের টনক নড়ে না, সেই দেশে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না লইয়া সাধারণ এক চিকিৎসকের রোগীর দেহে ছুরি চালাইবার দুঃসাহস দেখিয়া বিস্ময়ের কিছু নাই। আমরা মনে করি, সকলের জন্য সুলভ ও নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিতের রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার ভুলিয়া চিকিৎসা ব্যবস্থায় যখন পাইকারি বাণিজ্যিকীকরণ চালানো হয়, তখন ভুয়া চিকিৎসক বা ভুল চিকিৎসার বাড়বাড়ন্তই বাস্তবতা হইয়া দাঁড়ায়। একই কারণে অগ্নিতে পঙ্গপালের ঝাঁপ দিবার ন্যায় সাধারণ রোগীদের মধ্যেও নিছক বৃহৎ ডিগ্রি দেখিয়া ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফাঁদে পা দিবার প্রবণতা সৃষ্টি হয়।