এমন ডিসি ও ওসি দিয়ে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে
প্রতি পাঁচ বছর পর নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই মাঠের রাজনীতি গরম হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ধরনের দাবিদাওয়া তুলতে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের দিক থেকেই চাপটা আসে বেশি। এই দুটি দলের আন্দোলনের কারণেই ১৯৯১ সালে সুষ্ঠু ভোট পেয়েছিল দেশ। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কেন নির্বাচন কমিশনের মুখ্য ও শক্তিশালী ভূমিকা থাকা প্রয়োজন, তা নিয়ে তখনো মানুষের মধ্যে কোনো আলোচনা ছিল না।
সত্যি বলতে ১৯৭৩ সালে প্রথম নির্বাচন থেকে ১৯৯১ সালের পঞ্চম নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন মানুষের চোখের আড়ালেই থেকেছে। ওই সময় পর্যন্ত কমিশন নিয়ে তেমন কোনো তর্কবিতর্ক ছিল না। ১৯৯১ সালে সুষ্ঠু ভোটের পর নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চে মাগুরা-২ আসনের বিতর্কিত উপনির্বাচনের কারণে। কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায় নির্বাচনের নামে প্রহসন দেখেছিল মানুষ। এই আস্থাহীনতা জারি থাকে পরবর্তী বেশ কিছু বছর। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এ দেশের রাজনীতিতে কেবল সংকটেরই সৃষ্টি করেছে। এর জের আমাদের এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
মাগুরায় সরকারি দলের হামবড়া ভাবের কাছে নির্বাচন কমিশনের অসহায় আত্মসমর্পণ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জন্ম দেয়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরের তিনটি নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য হলেও নানা রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে ওই ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। দেশ আবারও দলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে ফিরে যায়। এই ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যরা পরবর্তী সংসদ স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকেন। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনই দেশে ও বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। প্রশ্ন ওঠে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন আসলে কতটা কর্মক্ষম।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক ও আস্থাহীনতা ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থার অন্যতম অনুঘটক। পরের বছর অধিকতর গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনের পর কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসে। সেই আস্থা তলানিতে ঠেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে অব্যাহত রাজনৈতিক মতানৈক্য ও দ্বন্দ্বের কারণে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে কমিশন কিছুতেই বের হতে পারছে না।