ক্ষতিগ্রস্ত ও অনিরাপদ হচ্ছে শিশুর জীবন
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, চিন্তা জগতে পরিবর্তন, দায়িত্বের বন্টন ও পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থার কারণে পরিবার ও নারী-পুরুষের সম্পর্কে ভাঙন বাড়ছে। আইন, পাপ-পুণ্যের বোধ ও নীতিকথা দিয়ে একে ঠেকানো কঠিন। এই সংসার ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে, সেই পরিবারের শিশুরা এবং তারা আশ্রয়চ্যুত হচ্ছে। যে কারণেই সংসার ভাঙুক না কেন, পরিবারের সন্তানদের সেই দায় বহণ করতে হয় পুরোটা জীবন ধরে।
বর্তমানে আমাদের সমাজ একটা রেখার উপর দিয়ে চলছে। যে রেখার একপাশে বাঙালি মন-মানসিকতা, সাংসারিক দায়-দায়িত্ব নারী-পুরুষের অধিকার বোধ ও বিয়ে নামের প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। অন্যদিকে রয়েছে পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ তৈরি হওয়া, সংসারের বাইরে নারীর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ও আয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং পুরুষের চিন্তা চেতনায় বড়ধরনের পরিবর্তন না আসা। ফলে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে সংঘাত। এই সংঘাত প্রথম আঘাত হানছে পারিবারিক কাঠামোর উপর।
বিয়ে, পরিবার, সন্তানপালন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ, দায়-দায়িত্ব, টাকা পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা, বিয়ের পরে অন্য নারীতে বা পুরুষে আসক্ত হওয়া, ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত নানাধরণের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। একে কেন্দ্র করে বাড়ছে অসুখী দাম্পত্য জীবন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তিক্ত হচ্ছে, কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশের সমাজে অনেক স্বামী-স্ত্রী এখনো চেষ্টা করেন সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বা সামাজিক সমালোচনা এড়াতে “অসুখী সম্পর্কটি”ই টিকিয়ে রাখতে। এভাবে চলতে চলতে একদিন এমন একটা দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে, যখন আর পালিয়েও বাঁচা যায় না। দেখা যায় স্বামী বা স্ত্রীকে নিহত বা আহত হতে হয়, কাউকে খুনি হতে হয়, সন্তানকেও জিম্মি হতে হয় বা প্রাণ দিতে হয় ঐ তিক্ত সম্পর্কের ফলে।
তাই সন্তান ও পরিবারকে অবলম্বন করে একটি “অস্বাস্থ্যকর দাম্পত্য সম্পর্ক” টিকিয়ে রাখতে চাইছেন না অনেকেই। শুধু লোক দেখানোর জন্য নিজেদের জীবনকে বিপর্যস্ত না করার কথা ভাবছেন। মূল কথা হলো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ও বিশ্বাস হারিয়ে গেলে তা একটি অস্বাস্থ্যকর ও লোক দেখানো সম্পর্কে পরিণত হয়। তখন সন্তান, দায়-দায়িত্ব সব ঠুনকো হয়ে পড়ে। সম্পর্কটা হয়ে পড়ে সাংঘর্ষিক। নানা রকম আলাপ-আলোচনা করেও যখন সমন্বয় করা যায় না, তখন বিয়ে বিচ্ছেদ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।