১৫ আগস্ট এবং সিদ্দিকুরের প্রতিরোধ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সংঘটিত ইতিহাসের জঘন্যতম ট্র্যাজেডির প্রায় অনুচ্চারিত এক অকুতোভয় চরিত্র সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন এএসআই (অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর)। ওই দিন তিনি বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। ঘাতকদের অতর্কিত আক্রমণে প্রাথমিক পর্যায়ে হকচকিত হলেও চটজলদি প্রস্তুতি নিয়ে তিনি অন্যান্যের সঙ্গে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘাতকদের ভারী অস্ত্র ও অপেক্ষাকৃত বেশি লোকবলের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। এক পর্যায়ে এই অকুতোভয়, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্য ঘাতকদের আক্রমণে কর্তব্যরত অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন।
এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের এই আত্মাহুতির তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত: তিনি মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার লক্ষ্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। দ্বিতীয়ত: তিনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাপুরুষের মতো কর্তব্যস্থল ত্যাগ করেননি। তৃতীয়ত: এই আত্মাহুতি তাঁর দেশপ্রেম এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আদর্শের প্রতি ভালোবাসা ও অঙ্গীকার প্রমাণ করে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশ পুলিশের এই নির্ভীক সদস্যের চরম আত্মত্যাগের পেছনের কারণ কী? উত্তরের জন্য সিদ্দিকুরের পেশাগত জীবনের কিছুটা রেখাপাত করা প্রয়োজন। সিদ্দিকুর ১৯৬১ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। সে সময় অর্থাৎ ষাটের দশকের প্রায় পুরোটা সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। একের পর এক আন্দোলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণ ক্রমান্বয়ে ধাবিত হচ্ছিল ১৯৭১-এর চূড়ান্ত পরিণতি অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের দিকে। এ সময় প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দেশপ্রেম, ব্যক্তিত্ব, নিরাপস রাজনৈতিক অবস্থান, বজ্রকণ্ঠের বাণী অন্য সবার মতো সিদ্দিকুর রহমানের মনকেও প্রচণ্ডভাবে আন্দোলিত করেছিল। তাঁর মনোজগতে এই অভাবনীয় অনুরণন স্বাধীনতার পর শুধু অব্যাহতই ছিল না, বরং আরও গভীর হয়। এ ক্ষেত্রে সদ্য স্বাধীন দেশের মূল স্থপতি বঙ্গবন্ধুর পুলিশের একাধিক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণের কিছু অংশ প্রাসঙ্গিক মনে হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড