দেশের ব্যাংক খাতে ডলার ক্রয়-বিক্রয় লইয়া যেই পরিস্থিতি বিরাজ করিতেছে, উহা অর্থনীতির জন্য তো বটেই, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রশ্নেও সুখকর কিছু নহে। মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘মৌখিক’ নির্দেশে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করিলেও বাস্তবে ব্যাংকগুলি ঘোষিত অঙ্কের চাইতে অধিক দরে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করিতেছে। উপরন্তু কোনো কোনো ব্যাংককে যেরূপে কাগজ-কলমে ঘোষিত দরই দেখাইতে হইতেছে, উহার সহিত ‘কিল খাইয়া কিল হজম’ করিবার বাংলা প্রবাদটিই কেবল তুলনীয় হইতে পারে। সমকালের আলোচ্য প্রতিবেদনের এই তথ্যও উদ্বেগজনক, গ্রাহক চাহিদা মিটাইতে অধিক দরে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করিতে গিয়া যেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হইতেছে, উহা পরিশোধ করিতে হইতেছে ‘অঘোষিত’ পন্থায়। অতিরিক্ত দরে ক্রয় করিয়া অতিরিক্ত দরেই বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকে ‘মার্জিন’ তথা লভ্যাংশ যদিও ঘোষিত ক্রয়-বিক্রয় দরের ন্যায়ই থাকিতেছে; স্বচ্ছতা ও সুশাসন উহাতে দারুণভাবে উপেক্ষিত।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্যও ডলার বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি হইয়া উঠিয়াছে শাঁখের করাত। একদিকে ঘোষিত দর মানিলে রেমিট্যান্স কমিয়া আসিতেছে। ব্যাংকগুলি গ্রাহকের ডলার চাহিদা মিটাইতে পারিতেছে না। অন্যদিকে ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ না করিলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়া যাইবার আশঙ্কা করিতেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৎসরের মাঝামাঝি যখন অঘোষিতভাবে ডলারের দর বাজারের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছিল; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সত্ত্বেও তখন রেটিম্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাইয়াছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর হইতে নির্ধারিত দর প্রয়োগে কড়াকড়ির পর উহা কমিয়া যায়। তখন হইতে প্রায় ধারাবাহিকভাবেই রেমিট্যান্স প্রবাহ নির্ধারিত দর প্রয়োগের কড়াকড়ির সহিত তাল মিলাইয়া উঠানামা করিতেছে। আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।