চলচ্চিত্র আর আমলা
মৃণাল সেনের ‘কলকাতা ৭১’ ছবিটি শুরু হয়েছিল কুড়ি বছরের এক ছেলেকে নিয়ে। মেট্রো সিনেমায় ছবিটি মুক্তি পেলে বিশাল দর্শকের ভিড় দেখা গেল। টিকিটের জন্য তখন লম্বা লাইন।
১৯৭১ সাল বা তার আগে-পিছের কয়েকটি বছর কলকাতাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ নকশাল আন্দোলনে কাঁপছিল। যাঁরা ছবি দেখতে আসছিলেন, তাঁদের সবার জীবনেই এ সিনেমাটির মতোই গল্প ছিল। কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ ভাই, কেউ বন্ধু। ছবিটিকে ভালোবেসেছিলেন তাঁরা, ঘৃণা করেছিলেন সিস্টেমকে।
যদি কোনো ছবি নিয়ে বিতর্ক হয়, তাহলে বুঝতে হবে ছবিটির ভেতর অন্য শক্তি লুকিয়ে আছে। হল থেকে বেরিয়ে দর্শকেরা নানা কথা বলছেন।
১৯৭২ সালে একটি ছোট্ট চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারক হয়ে মৃণাল সেন সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন। শেষ দিনটা ছিল ভারতীয় ছবির দিন। উৎসবের পরিচালক ‘কলকাতা ৭১’ ছবির একটি ভালো প্রিন্ট ভেনিস থেকে জোগাড় করে এনেছিলেন। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অর্জুন সিংকে কিছু বলতে বলা হলো। তিনি ছোট্ট একটা ভালো বক্তৃতা করলেন। ছবি শেষ হলে দর্শকেরা মৃণাল সেনকে ঘিরে ধরলেন। কিন্তু মৃণাল সেনের কাছে এক তরুণী এসে জানালেন, ছবিটা দেখে রাষ্ট্রদূত অর্জুন সিং নাকি মহা খাপ্পা হয়েছেন।
অর্জুন সিং সিনেমা শেষে আর কথা বললেন না মৃণাল সেনের সঙ্গে। তবে ডিনার পর্বে অর্জুন সিং এসে বললেন, ‘এ ছবি সত্য বলেনি।ভারতের সত্যিকার চিত্র তুলে ধরেনি। ভারতের অর্থনীতির কথা, অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন ও ভারতের জেট প্লেনের গতি নিয়ে কিছুই বলা হয়নি!’
ব্রিটিশ ডকুমেন্টারি আন্দোলনের প্রধান বেসিল রাইট সেখানে ছিলেন। অর্জুন সিংয়ের বক্তৃতা শুনে তিনি রাগে কাঁপছিলেন। কলকাতায় ফিরে আসার পর মৃণাল বেসিলের কাছ থেকে একটা চিঠি পেলেন: ‘রাষ্ট্রদূতের কথাটা তেমনভাবে নিয়ো না। সরকার এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকেরা ছবিটবি বোঝে না।’