বদ্বীপ পরিকল্পনায় নদী বাঁচবে?
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এবং উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের নাম ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’। এ রকম একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটুকু হবে বা ২১০০ সালের মধ্যে যাঁরা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এবং বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাঁরা এই প্রকল্পকে কতটা এগিয়ে নিতে পারবেন– সেটি অন্য আলাপ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ; যার জন্মই হয়েছে নদীর পলি সিঞ্চনে এবং যে কারণে এই দেশটিকে বলা হয় ‘নদীমাতৃক’, সেই দেশের নদীর সুরক্ষায় এই সুদূরপ্রসারী বদ্বীপ পরিকল্পনায় কী আছে? এই পরিকল্পনা কি দেশের বিপন্ন নদীগুলোয় প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে দিতে পারবে? বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে ২০৩১ সাল পর্যন্ত যে বিনিয়োগ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে, সেখানে ৮০টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে যে অর্থ খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৫ শতাংশ অর্থ খরচের কথা বলা হয়েছে উপকূল ও নদী সুরক্ষায়।
উপকূল ও নদীর সুরক্ষা বলতে কী বোঝানো হয়েছে? উপকূল সুরক্ষা বলতে সাদামাটাভাবে মানুষ বোঝে জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় স্থানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময়ে দেখা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ‘পদ্মা’ নামে একটি পুরো গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলেশ্বর নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায়। অর্থাৎ বেড়িবাঁধ বানানো হয়েছিল, কিন্তু সেটি টেকসই হয়নি। যে কারণে ওই সময়ে দুর্গত এলাকার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা এই লেখককে বলেছিলেন, ‘ত্রাণ নয়, বাঁধ চাই।’ ফলে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে ২০৩১ সালের মধ্যে যে অর্থ খরচ করা হবে, তার একটি বড় অংশ বেড়িবাঁধ নির্মাণে খরচ হবে, এটি বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই বাঁধ কতটা টেকসই হবে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের কৌশলই বা কী হবে?