কোরবানি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব
দেশ ও জাতিভেদে একই ধর্মমতের মানুষের ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতার রকমফের রয়েছে। যেমন বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের দেশ ভারতবর্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যকার ধর্মীয় আচারে ভিন্নতা বা বৈপরীত্য চোখে পড়ার মতো। যেমন বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা, মাড়োয়ারিদের কালীপূজা, মারাঠিদের গণেশপূজা। এরূপ ছটপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা ইত্যাদি জাতিভেদে প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
দক্ষিণ ভারতের চার রাজ্য– কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ুতে অনার্য দ্রাবিড় গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। আর্যদের সেখানে প্রবেশ ঘটেনি। তাই উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয়দের পরস্পরের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আর্য-অনার্য দ্বন্দ্ব ও বিতর্ককে কেন্দ্র করে। যেমন দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে রাবণের পূজা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। অসুর রাবণকে তারা দেবতা জ্ঞান করে। সীতাকে রাবণ অপহরণ করেছিল বটে, কিন্তু সীতার সম্মতি ব্যতিরেকে তাকে স্পর্শ না করার প্রতিশ্রুতি রাবণ দিয়েছিল। রাবণ চরিত্রের এই ইতিবাচক দিকটির কারণে তারা তাকে দেবতার আসনে রেখে পূজা করে। অর্থাৎ সীতাকে সতী সাব্যস্ত করার আয়োজনের পথ ধরে রাবণ দেবতাতুল্য হয়ে পড়েছে। রাবণের মন্দির, রাবণপূজা দক্ষিণ ভারত ব্যতীত ভারতের অন্য কোথাও দেখিনি।