রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে কাজের সুযোগ ও অভিজ্ঞতা
অনেকদিন পর একটা সুন্দর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান দেখলাম। গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। স্বল্প সময়ে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ক্ষমতার/পদের পালাবদলের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। টিভিতে অনুষ্ঠানটি দেখতে গিয়ে বেশ ভালো লেগেছে বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটকে দেওয়া সম্মান দেখে। এ শপথ অনুষ্ঠানের ছোট্ট দুটি বিষয় আমার কাছে একটু খটকা লেগেছে। এক. সাউন্ড সিস্টেম বোধকরি ত্রুটিপূর্ণ ছিল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কথা শুনতে কষ্ট হচ্ছিল, অপরদিকে শপথ শেষে চেয়ার বদলের তৃতীয়পক্ষীয় আওয়াজ-‘চেয়ার বদল, চেয়ার বদল’ খুব বাজে ঠেকেছে। দুই, ‘আমি’ বলার পর নতুন রাষ্ট্রপতি যে তার নাম বলবেন, তা বলতে অযথা বেশি সময় লেগেছে। তাতে এমন মনে হওয়া বোধকরি অসংগত হবে না যে, তিনি হয়তো ভেবেছেন স্পিকার ‘আমি’র পর নামটাও বলবেন এবং তখন তিনি নামটা বলবেন। আমি কর্ম-উপলক্ষ্যে বঙ্গভবনের অনেক শপথ অনুষ্ঠানের সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে থাকাকালীন দায়িত্ব পালন করেছি-অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিখুঁত রাখার বিষয়ে আমরা সচেষ্ট ছিলাম। চেয়ার বদল, চেয়ার বদলের আওয়াজটা তো ছিল অগ্রহণযোগ্য, এটা কেন হলো বুঝতে পাললাম না। তারপরও অনুষ্ঠানটি চমৎকার হয়েছে। আবদুল হামিদের বিদায় পর্বটি হৃদয়ে গেঁথে গেল আমার। মনে হচ্ছিল, এ সম্মান তার পাওনা ছিল, রাষ্ট্র এ সম্মান দিয়ে একটা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল। আশা করি, ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা থাকবে। এমন বিদায়ে বিদায়িজনের কষ্ট হতে পারে, খারাপ লাগতে পারে; কিন্তু চেয়ারটাকে নিজের মনে না করলে কোনো কষ্ট লাগার কথা তো নয়ই, বরং সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নেওয়াটা আনন্দের। আমরা বিশ্বাস করি, মো. আবদুল হামিদ এমন বিদায়ে আনন্দই পেয়েছেন, কারণ তিনি সাদামাটা একজন আমুদে ব্যক্তিত্ব, এমন প্রটোকলের বন্দিজীবন তার যে ভালো লাগেনি, এটা তিনি অনেকবারই বলেছেন। আল্লাহ তাকে সুস্থতাসহ দীর্ঘজীবী করুন।
ছোট্ট একটা বিষয় এ ফাঁকে বলে রাখি-রাষ্ট্রপতির নামের বানান নিয়ে আমরা প্রথমে বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম। টেলিভিশন ও পত্রিকায় নতুন রাষ্ট্রপতির নামের বানানে আমরা ভিন্নতা লক্ষ করলাম। ১. মো. মোঃ, মোহাম্মদ-তেমন কিছু না হলেও দেশের এক নম্বর স্বীকৃত পদধারীর নামের বানান তো একরকম হওয়াই শ্রেয়, বাঞ্ছনীয়। নিশ্চয় সেটা হতে হয় তার প্রকৃত নামের সঠিক বানান অনুসারে। ২. সাহাবুদ্দিন আর শাহাবুদ্দিনের ‘স’ এবং ‘শ’-দুটিই আমরা পত্রপত্রিকায় দেখলাম। ৩. এর আগে তার নাম আমরা পত্রপত্রিকায়, এমনকি তার নিজের লেখাতেও চুপ্পু সহকারে দেখেছি-এটা অনেক অনেক বছরের ব্যবহৃত নাম তার; কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময়ে কি তিনি অ্যাফিডেভিট করে ‘চুপ্পু’ বাদ দিয়েছেন? তা না হলে তার নামের এমন হাল হবে কেন? বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও কিন্তু প্রথম মেয়াদে মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট হিসাবেই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। গেজেটও সেভাবেই হয়েছিল, সংসদের সব পদেই তিনি নামের শেষে অ্যাডভোকেট বাদ দেননি, কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে কীভাবে যে তার ‘অ্যাডভোকেট’ বাদ পড়ল এবং কেন বাদ পড়ল-তা আজও বুঝলাম না। ধারণা করি, পদ বড় হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাম ছোট হয়ে যায়, কিংবা নামের কোনো অংশ তখন হয়তো বেমানান ঠেকে। আমি বলি, জীবনের বড় অংশে ব্যবহৃত নামটা একটা পদে এসে ‘এদিক-সেদিক’ করা বরং সংস্কৃতিহীনতার প্রকাশ ঘটায় কিংবা সৎসাহসের অভাব হিসাবে স্বীকৃত হয়। কারও এটা না করাই উত্তম মনে করি। আমাদের কিছু সহকর্মী অবশ্য অ্যাফিডেভিট করে তাদের নাম বদলিয়েছিলেন, যা আমার ভালো লাগেনি।