পুতিন ও সি চিন পিং, যেখানে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না
গত মাসে মস্কোয় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে রাশিয়াকে পারমাণবিক হুমকির ব্যাপারে সতর্ক করে চীন। ইউক্রেনে মস্কো যেন পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু না করে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার একটা বার্তা দেয় বেইজিং।
ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর পুতিন বেশ কয়েকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে তোলেন। তিনিই আবার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে গিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। অথবা বলা চলে, কয়েক ঘণ্টার জন্য সেটা করেন। যৌথ বিবৃতিতে যেসব প্রতিশ্রুতির তালিকা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে চীন ও রাশিয়া সম্মত হয়, সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে অন্য দেশে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে বিরত থাকা উচিত।
কিন্তু সি চিন পিং মস্কো ত্যাগ করতে না করতেই পুতিন সেই চুক্তি উপেক্ষা করলেন এবং বেলারুশে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিলেন। বেলারুশ রাশিয়ার সেই প্রতিবেশী দেশ, যেখান থেকে রুশ বাহিনী নতুনভাবে আগ্রাসন শুরু করতে পারে ইউক্রেনে। পুতিনের এই পদক্ষেপে খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। ২৭ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে, ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার দিকে সব পক্ষের মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং উত্তেজনা প্রশমনে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’
রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে ইউক্রেন নীতির ব্যাপারে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যে অমিল রয়েছে, এটি তারই দৃষ্টান্ত। রাশিয়াকে অনেক বড় অর্থনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে চীন। প্রোপাগান্ডা চালিয়েও সমর্থন করে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও চীন শান্তি স্থাপক হতে চায়, যুদ্ধের মদদদাতা নয়। অন্যদিকে পুতিন ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেন তাঁর জন্য অস্তিত্বগত এমন এক হুমকি, যার অপসারণ তাঁকে করতেই হবে।
ফলে পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সি চিন পিং অনেক সময়ই নিজেকে সরু দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটারত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন। একই সঙ্গে আবার তিনি দুই পক্ষের সম্পর্কের মধ্যে কোনো সীমারেখা না থাকার বিষয়টিরও তারিফ করছেন। যুদ্ধকালে কোনো কিছুই যখন রাশিয়ার পক্ষে নেই, তখন সি চিন পিংয়ের এই সমর্থন মস্কোর জন্য বড় এক কূটনৈতিক প্রাপ্তি। যদিও চীন এটা করছে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে যে মৌলিক বাধ্যবাধকতা, তার ভেতরে থেকেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইউক্রেন ইস্যু
- দ্বিপক্ষীয় বৈঠক