নদী মানে হচ্ছে প্রকৃতির আশীর্বাদ। সেই আশীর্বাদে ধন্য বাংলাদেশ। একটি সময় যাকে নদীমাতৃক দেশ বলা হতো। কিন্তু সেই পরিচয়টি এখন অনেক ধূসর। আমরা নদীগুলোকে আগলে রাখতে পারিনি। নদ–নদী, খাল–বিল কোনো কিছুই সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চটুকু করতে পারিনি।
আইন আছে, বিধি আছে, আইন প্রয়োগ করার প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু নদীগুলোকে যত্ন করার সেই আন্তরিক মন নেই, নেই জবাবদিহি প্রদর্শনের সংস্কৃতি। ফলে আমরা দেখি মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রজতরেখা নদী দখলের মহোৎসব।
এর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর কোনো তৎপরতা আমরা দেখি না। দখল হতে হতে নদীটি সংকুচিত হতে শুরু করেছে, সেদিকে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক।
নদী মানেই যেন যখন যে কারও দখলের স্বাধীনতা। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে রজতরেখা। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নদীটির বুক চিরে বানানো হয়েছে একাধিক রাস্তা। নদীর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে দোকানপাট। বসানো হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। এসব কারণে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে নদীর প্রবাহ। বর্তমানে পরিণত হয়েছে সরু মরা খালে। এ পরিস্থিতির জন্য দখলদারেরা দায়ী তো অবশ্যই, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না, এর জন্য কি স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর নিশ্চয়ই কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না।
স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, একটি সময় নদীতে পানিপ্রবাহের জোয়ার ছিল। ছোট-বড় লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, মালবাহী নৌকা চলাচল করত। শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে পানি দিয়ে দুই পাশের ফসলি জমিতে দেওয়া হতো। সেসব এখন অতীত। তিন বছর আগে অন্তত বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি ঢুকত।
এখন তা-ও হয় না। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নদী উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে এখন এ নদীর মধ্য দিয়ে হেঁটে চলার দুটি রাস্তা হয়ে গেছে। বিদ্যুতের বড় বড় টাওয়ার বসানো হয়েছে। নদী ভরাট করে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য করা হচ্ছে। এটা কি কোনোভাবে মানা যায়?