তাদের যুদ্ধ, তাদের খেলা

www.ajkerpatrika.com মাসুদ কামাল প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২৫, ১১:৫৬

দীর্ঘ তিন বছর নেগোসিয়েশনের পর ৬ মে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারত এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়, যেটিকে উভয় দেশই ‘ল্যান্ডমার্ক ট্রেড ডিল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বাড়তি ট্যারিফ আরোপের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে মারাত্মক একটা ঝাঁকুনি দিয়েছেন, তখন এমন চুক্তি ভারত ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে। নিশ্চিতভাবেই সেই রাতে তাদের ঘুম ভালো হয়েছে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেই রাতে আইপিএলের একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। মুম্বাই ইন্ডিয়ানস মুখোমুখি হয়েছিল গুজরাট টাইটানসের। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল এটি। কারণ, দুটি দলই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চারটি স্থানের মধ্যে ছিল। মুম্বাইয়ের দর্শকদের হৃদয় ভেঙে দিয়ে গুজরাট ম্যাচে জিতে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও মুম্বাইয়ের দর্শকদের সেই রাতে ঘুমের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ, হারের পরও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস শীর্ষ চারের মধ্যে রয়ে গিয়েছিল।


সম্ভবত প্রায় একই রকম নিশ্চিন্তে সেই রাতে বিছানায় গিয়েছিল পাকিস্তানের শিয়ালকোট, সাকার গড়, ভিম্বের, কোটলি, মুজাফফরাবাদ, মুরিদকে ও বাহাওয়ালপুরের সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের সেই ঘুম সম্পন্ন হয়নি। তার আগেই মধ্যরাতে যেন তাদের মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছিল। এই জায়গাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল ভারত। ভারতের দাবি, তাদের হামলায় পাকিস্তানের ৩১ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছে। যারা মারা গেছে, তারা তো চলেই গেছে। আর যারা বেঁচে রয়েছে, তারা আছে তীব্র আতঙ্কের মধ্যে। এরপর পাল্টা আক্রমণ পাকিস্তানও করেছে। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের ৫টি বিমান ভূপাতিত করেছে, আর তাদের আক্রমণে ভারতের ১৫ নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছে।

সব মিলিয়ে এ কথা এখন বলা যায় যে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধটা আসলে লেগেই গেছে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় সেই ২০১৪ সাল থেকে। এই দীর্ঘ সময়ে মোদি বা বিজেপিকে যাঁরা কিছুমাত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাঁরা খুব সহজে ২২ এপ্রিলের পর থেকে ধারণা করছিলেন, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে যুদ্ধ। বিজেপি রাজনীতির মূল ধারাটা এমন। তারা পাকিস্তানকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয়, এই ধারণা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায়। ফলে ৬ মে রাতের এই হামলা ভারতের দিক থেকে অবধারিত ছিল।



এটা নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফোর্সের একটি গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। সে ঘটনায় ভারতের ৪০ জওয়ান নিহত হন। এটা ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। এর কদিন পরই ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের বালাকোটে। ভারত দাবি করে, এই হামলায় নাকি পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে। বিপরীত দিকে পাকিস্তানের দাবি ছিল, গোটা কয়েক গাছ ছাড়া আর কিছুরই কোনো ক্ষতি হয়নি। জবাবে ঠিক পরদিন পাকিস্তান ভারতের কয়েকটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ভারতের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়, তাদের একজন এয়ারফোর্স অফিসার আটক হন পাকিস্তানে। পরে তাঁকে ছেড়েও দেয় পাকিস্তান। সেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ফল কী হয়েছে? যুদ্ধে কে জিতেছে? পাকিস্তান নাকি ভারত? সেই যুদ্ধ বা সার্জিক্যাল অ্যাটাকের ফলে পাকিস্তানের আদৌ কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে কিন্তু কারও কোনো মাথাব্যথা ছিল বলে মনে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ ছিল আক্রমণ করা। সেই আক্রমণের কথা পুরো নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগানো হয়েছে। বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে।


ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে আমরা যুদ্ধের ঘটনা পড়তাম। দেখতাম, এক রাজা আরেক রাজার দেশ দখল করে নেয়। যুদ্ধে পরাজিত রাজা বন্দী অথবা নিহত হয়। যুদ্ধের সেই ফরম্যাট এখন আর নেই। এখন জয়-পরাজয়টা ঠিক বোঝা যায় না। এই যে হামলা করল ভারত, তারা কি এই যুদ্ধে জিতে গেছে? পাকিস্তানের মিডিয়াগুলোতে কিন্তু ভিন্ন খবর। তারা দাবি করছে, ভারতের পাঁচটি বিমান তারা ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল বিমান রয়েছে। ভারতের মিডিয়ায় কিন্তু খবরটি পাওয়া যাবে না। তাহলে প্রকৃত সত্য কোনটি? জনগণের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে এটা জানা সম্ভব হবে না। সরকার সাধারণ মানুষকে তাদের পছন্দ ও প্রয়োজন মোতাবেক তথ্য দেবে। সেই তথ্যে মানুষ উত্তেজিত হবে, ভাববে—তারা একটি শক্তিশালী ও দেশপ্রেমিক সরকারের হেফাজতে রয়েছে! এটাই রাজনীতি। এই রাজনীতিই চলছে দেশে দেশে।
ভারতের কথাই ধরা যাক। তাদের মিডিয়াগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে, পাকিস্তান বুঝি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, পাকিস্তানের সরকার নতজানু হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করছে তাদের মহাপরাক্রমশীল মোদির কাছে। এসব ভেবে তারা হয়তো সাময়িক উত্তেজনায় আপ্লুত হবে। কিন্তু থলি হাতে বাজারে গিয়ে দেখবে অন্য দৃশ্য। তখন আবার সান্ত্বনা দেওয়া হবে—যুদ্ধের বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো একটু বাড়বেই! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কি যুদ্ধ চেয়েছিল? ২২ এপ্রিল পেহেলগামে যে ২৬ পর্যটক নিহত হলেন, তাঁদের পরিবার কি শান্তি পাবে পাকিস্তানের ৩১ জন নিহত হওয়ার সংবাদে? যারা ওই হত্যার জন্য দায়ী ছিল, তাদের কেউ কি রয়েছে ওই ৩১ জনের মধ্যে অথবা ওই হত্যাকারীদের কি নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা গেছে? আমি ওই ভিডিওগুলো দেখেছি। সেখানে নিহতদের আত্মীয়স্বজন অভিযোগ করছিলেন সরকারের দায়িত্বহীনতার প্রতি। অভিযোগের আঙুল যাদের দিকে উঠেছিল, তাদের কি বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব কখনোই মিলবে না। দেশের মানুষকে বরং উল্টো বুঁদ করে রাখার চেষ্টা চলবে বিজয়ের উল্লাসের মধ্যে। ভারতে যেমন চলবে, পাকিস্তানেও চলবে। দুই সরকারই নিজেদের বিজয়কে ফলাও করে প্রচার করবে। ভারত সরকার কিংবা পাকিস্তান সরকার কেউই হারবে না, হারবে শুধু দুই দেশের জনগণ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও