নারী যখন সম্মানিত
গত বছর একটা প্রতিবেদন করতে গিয়ে কথা বলেছিলাম কয়েকজন একা মায়ের (সিঙ্গেল মাদার) সঙ্গে। একজন মা তাঁর সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। সন্তানের বয়স যখন তিন মাস, তখন সেই নারীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ছেলের বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন একটা প্রি-স্কুলে ভর্তি করাতে যান। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলেকে বাবার নাম জিজ্ঞেস করে। শিশুটি তার খালু, অর্থাৎ সেই নারীর বড় বোনের স্বামীর নাম বলেন। কারণ, ছোটবেলা থেকে সে তার বড় খালা-খালুকে আম্মু-আব্বু ডাকছে। কিন্তু স্কুলের ভর্তি ফরমে তিনি সন্তানের বাবার নামের ঘরে প্রাক্তন স্বামীর নাম লিখেছেন, যাঁর সঙ্গে তাঁর সন্তান অপরিচিত। ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বারবারই বাবার নাম জিজ্ঞেস করছিল আর শিশুটি উত্তর দিতে পারছিল না। এটা একজন মা ও তাঁর সন্তানের জন্য ছিল অত্যন্ত বিড়ম্বনার।
কিছুদিন আগে হাইকোর্টে একটি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীর তথ্যসংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা ‘আইনগত অভিভাবকের’ নাম যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক—এই তিনজনের যেকোনো একজনের নাম উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবে। এর আগে অভিভাবক হিসেবে বাবা এবং মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। আর এখন যে রায় দেওয়া হলো তাতে অভিভাবক হিসেবে শুধু মায়ের নামও দেওয়া যাবে। হাইকোর্টের এই রায়কে আমরা যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ বলতেই পারি। এই রায়ের ফলে মায়ের পরিচয়েও যেকোনো শিশু তার শিক্ষার অধিকার পাবে। আবার কোনো পিতা-মাতাহীন শিশুও তার আইনগত অভিভাবকের পরিচয়ে শিক্ষালাভের অধিকার পাবে। আমার মতে, এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি স্বস্তিদায়ক হবে শিক্ষার্থীদের জন্য। হয়তো আর কোনো শিশুকে বাবার নাম ঠিকঠাক বলতে না পারার অপরাধে মাথা নিচু করে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। তবে এই রায়ের মাধ্যমে নারী যে পুরোপুরি অভিভাবকত্ব পেয়ে গেলেন, এমন কিছু নয়। এখনো জমিজমাসহ পারিবারিক বিভিন্ন ইস্যুতে নারীকে কোনো অভিভাবকত্ব দেওয়া হয়নি। তবে লিঙ্গবৈষম্যমূলক প্রথা দূরীকরণের ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকরী একটি পদক্ষেপ।