ভাষা চেতনার মাসে আশা
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রাষ্ট্রভাষা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু হলো। ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সালাম, বরকত, শফিক, রফিক, জব্বারের রক্তস্নাত ভাষার মাসে নতুন করে শপথ নিতে হবে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার। দুঃখজনক হচ্ছে শুধু ফেব্রুয়ারি এলেই আমাদের ভাষা চেতনা জেগে ওঠে। বাকি সময় উদাসীনতা আর অবহেলার।
বস্তুত দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। বাঙালি ছাড়া আর কোনো জাতি তার নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি, অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়নি। এ কারণে বাঙালির এই মহান আত্মত্যাগকে গোটা বিশ্ব স্মরণ করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে। তারা জানবে আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। তারা জানবে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন জাতিসত্তার কথা।
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় সফরে এসে তার বক্তৃতায় ঘোষণা করেন, ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ সেদিন ‘নো নো’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করেছিল এ দেশের ছাত্র-যুবকরা। এরপর নানা সংগ্রাম-আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। এর জন্য রক্ত ঝরাতে হলেও বাঙালি এক দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। একুশ তাদের এমনি সাহসী করে তোলে যে এরপর বলা হতে থাকে ‘একুশ মানে মাথা নত না করা।’ এই উন্নত শির জাতিই পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। বস্তুত একুশের পথ ধরেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।
হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলাসমৃদ্ধ একটি ভাষা। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশের মতো লেখক সৃষ্টি হয়েছে এই ভাষায়ই। কিন্তু সেই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পরবর্তী সময়ে তেমন কোনো উদ্যোগ কি নেওয়া হয়েছে? সময়ের অভিঘাতে পাল্টে যাচ্ছে সব কিছু। প্রযুক্তিনির্ভর একবিংশ শতাব্দীতে তরুণ প্রজন্মও বাংলা ভাষার প্রতি চরম উদাসীন। অন্য ভাষা শেখায় কোনো দোষ নেই। রবীন্দ্রনাথের শরণ নিয়ে বলতে হয়— ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি পরে ইংরেজি শেখার পত্তন।’ মাতৃভাষা ভালো করে না জানলে কোনো ভাষায়ই দক্ষতা অর্জন করা যায় না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন
- ভাষার মাস