বাইডেনের ‘মুক্ত বিশ্ব’ কি আসলেই মুক্ত
২০২২ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালানোর ছয় দিন আগে দেওয়া স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের বিরুদ্ধে ‘মুক্ত বিশ্বের মূল ভিত্তি নাড়িয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ তুলেছিলেন। পুতিনের বিশ্বাস ছিল তাঁর ‘সম্পূর্ণ উসকানিবিহীন’ আক্রমণ সামান্যই বাধার মুখে পড়বে। কিন্তু বাইডেন ঘোষণা করে বসলেন, ‘মুক্ত বিশ্ব তাঁকে (পুতিনকে) জবাবদিহির আওতায় আনবে’।
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি বাইডেন পরবর্তী স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ দেবেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, এক বছর ধরে ‘মুক্ত বিশ্ব’ কীভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন এবং পুতিনকে সাজা দিয়েছে, সে ভাষণে তা উঠে আসবে। ন্যাটো দেশগুলো এবং বিশ্বজুড়ে তাদের মিত্ররা ইউক্রেনের যোদ্ধাদের অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে এবং লাখ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
প্রশ্ন হলো, বাইডেনের ‘মুক্ত বিশ্ব’ বলতে আদতে কী বোঝায় এবং ‘অমুক্ত’ বিশ্ব থেকে তার তফাত কতটুকু? এবং ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া কি কে কোন পক্ষের তা পরীক্ষার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ লিটমাস টেস্ট হতে পারে?
এক অর্থে ইউক্রেন এ মুহূর্তে সন্দেহাতীতভাবে মুক্ত বিশ্বের একেবারে কিনারে রয়েছে। সেখানে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা, সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে নির্যাতন ও হত্যা করা, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেওয়া, বোমার ভয়ে হিমশীতল ভূগর্ভস্থ ঘরে আশ্রয় নেওয়া—এ সবই মানুষের মুক্ত জগতের ওপর নিষ্ঠুর আঘাত। এ অভিযানের সুনিশ্চিত লক্ষ্য হলো একটি স্বাধীন দেশকে পরাভূত করে তার ভূখণ্ড গিলে ফেলা এবং তাদের জাতীয় পরিচয়কে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। অর্থাৎ যেকোনো অর্থেই এ হামলা ইউক্রেনীয়দের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন আঘাত। রাশিয়ার সেনাদের মোকাবিলা করে ইউক্রেনীয়রা তাঁদের স্বাধীনতাকে বাঁচাতে জীবন দিয়ে লড়ছেন।
কিন্তু নির্যাতন ও দখল করাই শুধু স্বাধীনতাহীনতার একমাত্র আদল নয়। ২০২১ সালে প্রকাশিত নিজের স্মৃতিকথায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর শৈশবের একটি ঘটনার কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ১৯৪৪ সালে তিনি একজন মুসলিম দিনমজুরকে হিন্দু জনতাকে পেটাতে দেখেছিলেন এবং তাঁকে বাঁচাতে যাওয়া খুব বিপজ্জনক জেনেও তিনি তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা
- জো বাইডেন