আইএমএফের ঋণ আর বিদ্যুতের মিছাকলা
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকার দায়ী নয়, দায়ী রুশ-ইউক্রেন আর তাদের মিত্ররাএরা বিশ্বকে অস্থির করে বাজারদর চড়িয়ে দিয়েছে। আর করোনা মহামারী তো এজন্য আরও আগে থেকেই দায়ী। চিবিয়ে-চাবিয়ে বা ইনিয়ে-বিনিয়ে নয়, সোজাসাপ্টা এ কথা খোলাসা করে জানিয়ে দিয়েছেন সরকার ও সরকারি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের। রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে বলে স্বীকার করেছেন। পরক্ষণেই ‘তবে-কিন্তু’ যোগ করে বলেছেন, এজন্য সরকারকে দোষারোপ করা যাবে না। দায়ী বিশ্ব পরিস্থিতি।
যুক্তি-বুদ্ধি কত কড়া! নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মানুষের জীবনযাপনের খরচ আরও বেড়েছে। সরকার এখানেও নির্দোষ? নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান পণ্যগুলোর দাম আগে থেকেই বাড়তি। প্রতিদিন তা বেড়েই চলেছে। সরকার ঘটনা মানে, তালগাছ ছাড়ে না। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই। বিদ্যুৎ বা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাদবাকি পণ্য ও সেবার দাম আর বাড়াতে হয় না। সুই-সুতা থেকে পরিবহনের ভাড়া আপন গতিতেই বাড়তে থাকে। টানা কয়েক বছর ধরে চালের দাম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর দাম বেড়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল ও ডাল-চিনির দামও। জরুরি ওষুধের দাম বেড়ে গেছে অনেকটা নিঃশব্দে। যার দরকার সে কিনবেই। কিনতে বাধ্য। এজন্য কাউকে দায়বিদ্যুৎ প্রশ্নে কাণ্ডকীর্তি অনেকটা তুঘলকি স্টাইলের। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসির গণশুনানির ফলের অপেক্ষায় থাকার মধ্যেই সরকার নির্বাহী আদেশে গ্রাহকপর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর। আগামী মাসে আরেক দফা বাড়ানোর বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলা হয়েছে। ভর্তুকি কমাতে ধাপে ধাপে ১৫ শতাংশের মতো দাম বাড়ানোর বুদ্ধিও ঠিক করে রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের এ বাড়তি দাম কার্যকরের সমান্তরালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এন্তেজামও রয়েছে। তামাশার কাণ্ড হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের ‘দাম বৃদ্ধি’ বলতে চায় না সরকার। ‘দাদাকে আদা পড়া দেওয়া’ বা ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো’র মতো করে একে বলা হয় ‘মূল্য সমন্বয়’। কত অসহায় জনগণ! এ তামাশা-মশকরা হজম করা যেন আজন্মের পাপের প্রায়শ্চিত্ত।