অর্থমন্ত্রীর অদক্ষতা প্রমাণিত, তবু আছেন
৮ জানুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিকের বিজনেস শাখার প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম: ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টস্ আন্ডার স্ট্রেস’, মানে ‘দেশের লেনদেনের ভারসাম্য চাপের মুখে’। ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ‘ওভার-অল ঘাটতি’ এর আগের বছরের ওই পাঁচ মাসের ঘাটতি ২ দশমিক ০২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৩৮৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। আরও বিস্ময়কর হলো, ওই খবর অনুযায়ী ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট বহু বছর পর এই পাঁচ মাসে নেতিবাচক প্রবাহ দেখাচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের এমন একটি কম্পোনেন্ট, যার মধ্যে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যায়ে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ৪ দশমিক ৮৩৮ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ওখানেই ১৫৭ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি সৃষ্টি হয়ে গেছে। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর দাবি করেছেন, গত কুড়ি বছরে তিনি কখনোই ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতি হতে দেখেননি—এবারই প্রথম দেখলেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেনও তাঁর কথায় সায় দিয়েছেন। জাহিদ হোসেনের মতে, এই ঘাটতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী মাসগুলোতেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট অব্যাহত থাকবে।
২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে সরকারের হিসাব মোতাবেক ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের নির্দেশনা মানলে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। যে হিসাবই ব্যবহার করা হোক, এক বছর চার মাসে রিজার্ভের এহেন পতনের ধারা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তার মানে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা বড় ধরনের রিজার্ভ-সংকটে পতিত হয়েছে, যেখান থেকে মুক্তি এখনো দৃশ্যমান নয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে অভূতপূর্ব ঘাটতির জন্য প্রধানত আমদানি ব্যয়ের উল্লম্ফনকে দায়ী করা হচ্ছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার প্রধান কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক ২০২২ সালের জুলাই-নভেম্বর পর্যায়ে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে, রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে, আর রেমিট্যান্স প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু একেবারেই অন্য কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ‘ওভার-অল ঘাটতি’ ওই পাঁচ মাসে তিন গুণ বেড়ে ৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে, যার জন্য প্রধানত দায়ী প্রাইভেট সেক্টরে বাণিজ্য-ঋণের (ট্রেড ক্রেডিট) উল্লম্ফন এবং বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও পোর্টফোলিও বিনিয়োগের পতন। ট্রেড-ক্রেডিটের ঘাটতি এই পাঁচ মাসে চার গুণ বেড়ে ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে।