মুক্তির আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই রয়ে গেছে
মানুষের সভ্যতা আজ যত বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, তেমনটি অতীতের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। সাম্রাজ্যবাদীরা যেখানে ইচ্ছা গিয়ে যখন তখন হানা দিচ্ছে, দুর্বল দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করছে, দখল করছে বাজার, ঋণ দিয়ে জালে আবদ্ধ করছে এবং বিপন্ন করছে প্রকৃতি ও পরিবেশকে। শ্রেণিবিভাজনের সত্যকে অবলুপ্ত করে দিতে চাইছে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ছড়িয়ে দিচ্ছে মাদকাসক্তি। বিস্টৃততি ঘটাচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের। পদদলিত করছে বিশ্বজনমতকে। হত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংস ইত্যাদিকে পরিণত করেছে নিত্যনৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক ঘটনাতে। সাম্রাজ্যবাদের মুখে এখন আর কোনো মুখোশ নেই। জাতিসংঘ তার হাতের পুতুল, অধিকাংশ রাষ্ট্রই তার হুকুমের চাকর। ঋণ, পরামর্শ, ভীতি প্রদর্শন, আগ্রাসন- কোনো ব্যাপারেই রাখঢাক, হায়া-শরম নেই। পৃথিবীর সর্বত্র মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় জর্জরিত। কোনো কিছুই আজ আর অকলুষিত নেই। এমনকি নির্মল খেলাধুলাও পরিণত হয়েছে টাকার খেলায়।
আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যুদ্ধের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতা তো দেখা যাচ্ছে না। ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই। স্বাধীনতার হিসাব পরে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাই নেই- না অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, না জীবনের ক্ষেত্রে। ওদিকে রাষ্ট্র যে স্বাধীন, তাও বলার উপায় নেই। যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের সংগ্রামে অতি তীব্রভাবে বিরোধিতা করেছিল, এখন রাষ্ট্র চলে তাদের অঙ্গুলি সঞ্চালনে। দেশের শাসক শ্রেণি নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সাম্রাজ্যবাদীদের তোষণ করার ব্যাপারে। আর মুক্তি? সে তো সুদূরপরাহত।
পুঁজিবাদ যে মানুষের মুক্তিদাতা নয়, সে তো পরীক্ষিত সত্য। পুঁজিবাদ ব্যক্তিকে নিরন্তর উৎসাহিত করে মুনাফা করতে। যার ফলে ব্যক্তি কেবল মুনাফাই চেনে, মনুষ্যত্ব চেনে না এবং মুনাফা অর্জনকেই ভাবে চরিতার্থতার একমাত্র উপায়। সভ্যতা অনেক এগিয়ে আজ করাল গ্রাসে পড়ে গেছে বিবেকহীন ও রক্তপিপাসু এক দানবের।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মানব সভ্যতা
- মুক্তির উপায়
- পুঁজিবাদ