একজন অসাম্প্রদায়িক মাটির মানুষ

www.ajkerpatrika.com জাহীদ রেজা নূর প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৫

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বর্তমানে যে স্থূল বিতর্ক শুরু করেছে একদল লোক, তাদের হাত থেকে নজরুল বেঁচে গেছেন স্রেফ তাঁর নামটি মুসলিম বলে। নজরুল তাঁর জীবদ্দশায় যে পথটি অতিক্রম করেছেন, তার পুরোটাই মানবতার রঙে রাঙানো। হিন্দু-মুসলিম দুই দিক থেকেই কটুকাটব্যে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন নজরুল। এ নিয়ে তাঁর আক্ষেপ দেখা যাবে ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায়। এই কবিতাটিই যেন নজরুল-জীবনের সংক্ষিপ্তসার। কত দিক থেকেই-না তাঁকে আক্রমণ চালানো হয়েছে! তারই উত্তর কাব্যিক ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে কবিতাটিতে। ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে যে কুরুচিপূর্ণ প্রচার চালানো হয়, তার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাই তাঁকে নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে বিপদে পড়ে যায় মতলববাজের দল। নিজের পছন্দমতো নজরুলকে ব্যবহার করতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করে, আদতে নজরুল তাদের সীমিত গণ্ডিতে আবদ্ধ নন। নজরুল অনেক বড়। নজরুল দিয়েই ঘায়েল করা যায় সংকীর্ণতার স্তবকারীদের।


স্বল্প পরিসরে নজরুলকে নিয়ে লিখতে যাওয়ার বিপদ আছে। তাঁর ভাবনার জগৎটি খুবই পরিষ্কার। কোনো এক জায়গায় নোঙর ফেলেননি তিনি। যখন যা মনে হয়েছে দরকারি, তখন তা নিয়েই কথা বলেছেন। বুঁদ হয়ে গান লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, রাজনীতিতে জড়িয়েছেন, প্রেম করেছেন, আড্ডা দিয়েছেন, আরও কত-কী। মৌনতার আগপর্যন্ত তাঁর মতো গতিশীল ও বর্ণাঢ্য জীবন কজন মানুষ পায়?

২.


কোনো ধরনের সংকীর্ণ ট্যাগ দিয়ে নজরুলকে আটকানো যাবে না। বিশেষ করে যাঁরা ধর্মান্ধ হয়ে নজরুলকে ব্যবহার করতে চান, তাঁদের বিপদেই ফেলেছেন নজরুল। হামদ-নাত নিয়ে যিনি গর্ব করবেন, তিনি ভাবতেই পারবেন না, কত সুন্দর শ্যামাসংগীত লিখেছেন নজরুল। শিল্পে-কাব্যে ধর্মীয় সংকীর্ণতার স্থান নেই, সে কথা নজরুল বুঝতেন। সৃষ্টিশীল মানুষ সেভাবেই লেখালেখি করেন। তাই সকল ধর্মের মানুষকেই শ্রদ্ধা করার বাণী রয়েছে নজরুলের রচনায়। ধর্ম নিয়ে যেকোনো ধরনের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন নজরুল।


মূলত ঘুরেফিরে তাঁর কয়েকটি কবিতাই এ রকম আলোচনায় আনা হয়। নিজের দিকে ঝোল টেনে নেওয়ার জন্য কেউ কেউ কবিতাগুলোকে ব্যবহার করতে যান বটে, কিন্তু জীবনের পথপরিক্রমায় দেখা যায়, সব ধর্মের সব মানুষেরই অধিকার রয়েছে নজরুলের প্রতি।

৩.


কলকাতার অ্যালবার্ট হলে বাংলার হিন্দু-মুসলমানদের পক্ষ থেকে কবি নজরুলকে ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর (১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ১৯ অগ্রহায়ণ) যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, তাতে সভাপতি ছিলেন বিজ্ঞানাচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। তাঁর অভিভাষণের পর ‘নজরুল-সংবর্ধনা সমিতি’র সভাপতির সভ্যদের দেওয়া মানপত্রটি পাঠ করেন এস ওয়াজেদ আলি। অভিনন্দনের উত্তরে কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে প্রতিভাষণ দেন, তার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো: ‘কেউ বলেন, আমি যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নই। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি। গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মিলানো যদি হাতাহাতির চেয়েও অশোভন হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে, আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে তাদের কোনো বেগ পেতে হবে না। কেননা, একজনের হাতে আছে লাঠি, আর একজনের আস্তিনে আছে ছুরি।’


কবি এই ভাষণ দেওয়ার পর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নজরুলের স্বদেশি সংগীত ও দেশাত্মবোধমূলক কবিতার প্রশংসা করে আবেগময় এক ভাষণ দেন।


বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত নজরুল রচনাবলীর অষ্টম খণ্ডে নজরুলের যে অভিভাষণগুলো রয়েছে, সেদিকে আরও নিবিষ্ট মনোযোগ দেওয়া জরুরি। মুসলিমদের গোঁড়ামি নিয়ে নজরুল যে কথাগুলো বলেছেন, তা কি এখনো কম প্রাসঙ্গিক? শোনা যাক তেমন একটি রচনার অংশ, ‘আমাদের বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে যে গোঁড়ামি, যে কুসংস্কার, তাহা পৃথিবীর আর কোনো দেশে কোনো মুসলমানের মধ্যে নাই বলিলে বোধ হয় অত্যুক্তি হইবে না। আমাদের দেশের কল্যাণকামী যেসব মওলানা সাহেবান খাল কাটিয়া বেনোজল আনিয়াছিলেন, তাহারা যদি ভবিষ্যৎদর্শী হইতেন, তাহা হইলে দেখিতে পাইতেন—বেনোজলের সাথে সাথে ঘরের পুকুরের জলও সব বাহির হইয়া গিয়াছে। উপরন্তু সেই খাল বাহিয়া কুসংস্কারের অজস্র কুমির আসিয়া ভিড় করিয়াছে। মওলানা মৌলবি সাহেবদের সওয়া যায়, মোল্লাকেও চক্ষু-কর্ণ বুঁজিয়া সহিতে পারি, কিন্তু কাঠমোল্লার অত্যাচার অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে, ইসলামের কল্যাণের নামে ইহারা যে কওমের, জাতির, ধর্মের কী অনিষ্ট করিতেছেন, তাহা বুঝিবার মতো জ্ঞান নাই বলিয়াই ইহাদের ক্ষমা করা যায়।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও