
পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাবে কি বাংলাদেশ?
East Pakistan Must Returns:Pakistan’s Hour of Reckoning After 54 Years পাকিস্তানি একটি পত্রিকার শিরোনাম এটি। দু-চারজন পথচ্যুত ছাড়া ১৮ কোটি বাঙালির ধমনীতে আঘাত করবে এমন আবদার। এই আবদারটি প্রকাশ করেছে, ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ক্যাচলাইন’ নামের ইংরেজি পত্রিকা। এমন সময় এই লেখাটি প্রকাশ হয়েছে,যখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বন্ধন দৃঢ় করার চেষ্টায় দুটি দেশের সরকারই আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছে। শুধু তাই নয়,পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও বাংলাদেশে সফর করলেন সমকালেই।
পাকিস্তানের পত্রিকাটি যখন পূর্ব পাকিস্তান পুনর্জন্মের স্বপ্ন দেখছে, তখন ইসহাক দার আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো মন্তব্য করলেন,পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো অমীমাংসিত ইস্যু নেই বলে। বললেন, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের হিস্যা প্রদান এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সুরাহা হয়ে গেছে দুবার। প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি ১৯৭৪ সালের ত্রিদেশীয় চুক্তি এবং ২০০১ সালে পারভেজ মোশাররফের বাংলাদেশ সফরকালের মন্তব্যকে উল্লেখ করেন।
কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি এভাবে প্রকাশ্যে মিথ্যাচার করতে পারে তা কল্পনাতীত। অবশ্য বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীও বহুবার এমনতর বক্তব্য বিভিন্ন সাক্ষাৎকার কিংবা টকশোতে দিয়েছে। তারা কখনো কখনো ১৯৭২ এর সিমলা চুক্তির রেফারেন্সও দেয়। অথচ একটা বিষয় চেপে যায় সিমলা চুক্তি ছিল পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। গণহত্যা হয়েছে বাংলাদেশে। বাকি দুটি বিষয়ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত। সেখানে ভারত পাকিস্তান চুক্তির সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ত্রিদেশীয় চুক্তিতেও বাংলাদেশের এই তিন দাবি মীমাংসা হয়নি।
সেই চুক্তিও পাকিস্তান স্পষ্টত লঙ্ঘন করেছে। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি তারা মেনে নিয়েছিল,তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানে যে হামুদুর রহমান তদন্ত কমিশন হয়েছিল সেখানেও যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। শুধু সামান্য কিছু পাকিস্তানি নাগরিককে তারা ফেরত নিয়ে বাকিদের নেওয়ার ব্যাপারে একাধিকবার ওয়াদা করেও একজনকেও ফেরত নেয়নি। বিশাল পাকিস্তানি জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ৫৪ বছর ধরে বসবাস করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবেশে চাপ সৃষ্টি করছে।
এত কিছুর পরও তারা এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলতে পারে কীভাবে? ওই যে শুরুতে বলেছিলাম দু-চারজন পথচ্যুতের কথা। সেই পথচ্যুতরা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সোচ্চার। ‘দ্য ক্যাচলাইন’ পত্রিকায় তার উদাহরণ দেওয়া আছে। পত্রিকাটি East Pakistan Must Return: Pakistan’s Hour of Reckoning After 54 Years শিরোনামের নিবন্ধে লিড ছবি হিসেবে ব্যবহার করেছে, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আজমিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের ব্যাজ পরানোর দৃশ্য। তাদের আশা পূরণের দীর্ঘচেষ্টার প্রমাণও পাওয়া যায় এই লেখায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়-গোলাম আযমের পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির কথা বলা হয়েছে। যে অ্যাজেন্ডা নিয়ে তিনি বিভিন্ন মুসলিম দেশে প্রচারণা চালিয়েছেন। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে তিনি বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে সফর করে অনুরোধও করেছেন। গোলাম আযমের পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা বিষয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশও হয়েছে। এবার পাকিস্তানের পত্রিকা পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার কথাই বলে দিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই যে এই দেশে পাকিস্তানমুখী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এসব কাজে যে পাকিস্তানের সম্মতি কিংবা সহযোগিতা রয়েছে এমন আভাসও স্পষ্ট।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মিথ্যাচার
- চুক্তিভঙ্গ