নির্বাচনের ডুগডুগি, নেতাদের ডিগবাজি

বিডি নিউজ ২৪ সালেহ উদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫০

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশন বলছে তারা প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আশ্বাস দিয়েছেন, এবারের নির্বাচন হবে একটি ‘সুন্দর’ নির্বাচন। এই ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা। কোথাও নতুন জোটের হিসাব–নিকাশ, কোথাও পুরোনো সমীকরণে ভাঙচুর। কেউ দল গোছাচ্ছেন, কেউ দল ভাঙছেন, কেউ নতুন দলে ভিড়ছেন, আবার কেউ পুরোনো পরিচয় ছুঁড়ে ফেলছেন। এক কথায় রাজনীতি এখন পুরোপুরি গতিময়।


বড় দুই দলও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে তাদের মনোনয়ন তালিকা। তবে শেষ মুহূর্তের কাটাছেঁড়া আর বদল দলগুলোর ভেতরে ভেতরে নতুন অস্বস্তি ও জটিলতা তৈরি করছে। এটুকুই যদি বলা হয়, তাহলে সেটা হবে মোটা দাগের প্রতিবেদন—সংক্ষিপ্ত, নিরাপদ এবং খানিকটা নিরাসক্তও।


কিন্তু নির্বাচন মানে তো শুধু প্রস্তুতির খবর নয়। এর বাইরেও অনেক গল্প থেকে যায়। কিছু গল্প আছে উদযাপনের, কিছু দুঃখ আর হতাশার, কিছু প্রকাশ্য নীতিহীনতার, আবার কিছু এমন, যেগুলো যে যেভাবে দেখেন, সেভাবেই তার অর্থ দাঁড়ায়। এই নির্বাচনের রাজনীতিও ঠিক তেমন, সংবাদে যা দেখা যাচ্ছে, তার আড়ালেও আছে বহু প্রশ্ন, দ্বিধা আর অস্পষ্টতা।


এনসিপির ‘নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি’


জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের পরিচয় সংকটে ভুগছিল। দলটি জন্ম নেওয়ার পর থেকে মাঠের রাজনীতিতে নানান সূত্রে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে প্রায় সমান্তরাল পথে হাঁটেছে। জুলাই সনদ, গণভোট, মুক্তিযুদ্ধের অবমূল্যায়ন, আওয়ামী লীগকে বেআইনি ঘোষণার দাবি—এসব ইস্যুতে দুই দলের অবস্থান ও কর্মসূচির ভেতরে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না।


তারপরও বাস্তবতা হলো, দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের হাতে গড়া এনসিপির ওপর আস্থা রেখেছিলেন। কারণ, দলটি শুরু থেকেই ‘নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি’র কথা বলছিল। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়া, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা তৈরি করেছিল।


সেই আশা–ভরসার প্রেক্ষাপটেই বলা যায়, অবশেষে এনসিপির ‘নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি’র নমুনা দেখতে পেল মানুষ। জামায়াতের নির্বাচনি জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তই আপাতত সেই নমুনা।


এই দেশে জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর, ধর্মীয় রাজনীতির ধারক, পাকিস্তানপন্থি চিন্তা ও অবস্থানের উত্তরাধিকার—এই অভিযোগগুলো বহু বছর ধরেই জামায়াতকে ঘিরে আছে। সেই বাস্তবতায় জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় এনসিপিকেও এই সব কর্মকাণ্ডের দায়ভার ভাগ নিতে হবে।


এখানেই ভাঙনটা সবচেয়ে গভীর। নিজেকে ‘তরুণদের দল’ হিসেবে তুলে ধরা এনসিপির কাছ থেকে কেউই আশা করেনি যে, তারা নিজেদের রাজনীতিকে জামায়াতের কাছে কার্যত ইজারা দেবে। তাই অনেকের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে তীব্র কটাক্ষ—‘নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি’ নয়, এটা ‘নতুন ইজারার রাজনীতি’।


এর ফলও চোখে পড়ার মতো। দেশের মানুষ হতাশ হয়েছে, আর সেই হতাশার ঢেউ সবচেয়ে জোরে আছড়ে পড়েছে এনসিপির ভেতরেই। দলটির বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। কেউ পদত্যাগ করেছেন, কেউ ক্ষোভ চেপে রাখতে না পেরে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছেন। সবচেয়ে বিক্ষুব্ধ এনসিপির নারী নেত্রী ও সমর্থকদের কাছ থেকে। তাদের কাছে এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক ভুল নয়, এটি আদর্শগত সংঘাত। সেই বেদনা ও ক্ষোভের ভাষাই যেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনের কথায় ধরা পড়ে—‘এই জিনিস হজম করে মরতেও পারব না আমি।’


মান্নার মনোনয়নের হাসি–কান্না


পত্রিকার শিরোনাম—‘ঋণখেলাপির তালিকায় নাম স্থগিত, মান্নার নির্বাচনে অংশ নিতে আইনগত বাধা কাটল’। মান্নার সমর্থকরা, যারা তার প্রগতিশীল চিন্তাধারার ভক্ত, নিশ্চয়ই খুশিতে উদযাপন করছেন। মান্নাও নিশ্চয়ই নিশ্চিন্ত—বগুড়ার আসন থেকে বিএনপির অনুকম্পায় হয়তো অবশেষে তিনি জয়ের স্বাদ পাবেন। ছাত্র অবস্থায় তরুণদের ভোটে এত এতবার চাকসু-ডাকসুর ভিপি হয়েছিলেন, কিন্তু জাতীয় নির্বাচন প্রতিবারই তার সঙ্গে বৈরিতা করেছে।


কিন্তু সত্যিই কি উদযাপনের কিছু আছে মান্নার জন্য? যেখানে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে হাসিনার লোকদের অনেকেই জেল খাটেছেন, সেখানে তিন মাসের জন্যই রেয়াত পাওয়াটা কি সত্যিই কোনো অর্জন? একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেতা হিসেবে এটি দুঃখজনকই বটে। আমাদের দেশে রাজনীতি এখনো দ্বৈত মানদণ্ডের অধীনে চলে— যারা রাজনীতিতে শুদ্ধতার প্রবক্তা, তারা ঋণখেলাপি হবেনই-বা কেন?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও