নগরে নারীদের এইডস ঝুঁকি

সমকাল ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৯

তানিয়া সুলতানা। বয়স ২৭ কি ২৮। তবে অভাব, দুশ্চিন্তা আর অসুখে বয়স কিছুটা বেশিই দেখায়। ঢাকা শহরের সাততলা বস্তিতে ভাড়া থাকে। ১০ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। স্বামী জামাল মুন্সি নগর পরিবহনের হেলপার। পরপর তিনবার সন্তান ধারণ করেও সন্তানের মা হতে পারেনি তানিয়া। প্রতিবারই গর্ভে সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। একটা অফিসে রান্নার কাজ করে তানিয়া। জামাল মুন্সির একটু-আধটু নেশার অভ্যাস আছে। সে কথা অবশ্য জানে তানিয়া। তবে পুরুষ মানুষের একটু-আধটু নেশা করা দোষের নয় বলেই ভাবে তানিয়া। শুধু নেশা নয়; নারীর প্রতি আসক্তিও আছে জামালের। কয়েকবার ধরাও পড়েছে তানিয়ার হাতে। প্রতিবারই অনুনয়-বিনয় করে 'এবারই শেষ' বলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। প্রতিবারই তানিয়া কেঁদেছে, ঝগড়াও করেছে। তখন আশপাশের লোকজন তাকে বুঝিয়েছে, পুরুষ মানুষ হলো সোনার আংটির মতো। বাঁকা হলেও আংটি তো সোনারই। তানিয়া শেষ পর্যন্ত আর রাগ ধরে রাখতে পারেনি, ক্ষমা করে দিয়েছে। জামাল কয়েক বছর ধরে প্রায়ই অসুস্থ থাকছিল। কখনও জ্বর, কখনও বা পেটে ব্যথা। বছর দুয়েক আগে তো অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন একজন ডাক্তারের চেম্বারে তাকে নিয়ে গেল তানিয়া। পরীক্ষা করার পর জানা গেল, জামাল মুন্সি এইডসে আক্রান্ত। তানিয়াকেও পরীক্ষা করতে হলো। জানা গেল, সে এইডসে আক্রান্ত নয় কিন্তু এইচআইভি পজিটিভ। ডাক্তার তাকে এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সবকিছু বুঝিয়ে বলেন। ঝুঁকি আছে তারও। নিতে হবে নিয়মিত চিকিৎসা; থাকতে হবে সাবধানে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তানিয়ার জমানো টাকায় হলো না। বেশ কিছু ঋণ করতে হলো। জামাল মুন্সি কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশনা ভুলে গিয়ে আবার নিষিদ্ধ পল্লিতে যায়। হয়তো আরও অনেক তানিয়ার মধ্যে ছড়িয়ে যায় এই ভয়াবহ অসুখ।


এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এইচআইভি এইডসের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডসের প্রাদুর্ভাব কম হলেও দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের এইচআইভি এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডস। তাদের তথ্যে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি।


বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে নতুন এইচআইভি পজিটিভ ছিল ৭২৯ জন আর মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের। তথ্যে আরও জানা যায়, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ছিল সব থেকে বেশি, যা ৬৭ শতাংশ। ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ তাদের এইচআইভি সম্পর্কে সচেতন, আর ৭৭ শতাংশ রয়েছে চিকিৎসার আওতায়। বাংলাদেশে সরকারিভাবে বেশিরভাগ এইডস রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ৯০ দশকের মাঝামাঝি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ প্রথম নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু করে। এর পর ২০০৪ সালে ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় এনজিওর মাধ্যমে এইচআইভি প্রিভেনশন প্রজেক্টের (হ্যাপ) কার্যক্রম শুরু হয়। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সেবা পৌঁছে দেওয়াই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল। ইউএসএইডের অর্থায়নে 'ফ্যামিলি হেলথ' ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্পের আওতায় ২০০০ সাল থেকে ড্রপ-ইন সেন্টার ও বাংলাদেশ এইডস প্রোগ্রামের অধীনে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনা করে। ২০০৮ সালে গ্লোবাল ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় সারাদেশে ড্রপ-ইন সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করে। কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৮ অনুযায়ী সেবাকেন্দ্র থেকে সাধারণত যাদের সেবা দেওয়া হয় তারা হলো- নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, হিজড়া, ইনজেকশনের মাধ্যমে যারা মাদক গ্রহণ করে, এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং এমএসএম (পুরুষে পুরুষে যৌন কাজ করে যারা)।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও