উসকানিতেও উত্তেজনা নয়, চাই কূটনৈতিক বিজয়
আকাশসীমা লঙ্ঘন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপে প্রাণহানিসহ চরম ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছে মিয়ানমার। দেশটির এই কর্মকাণ্ডে ঢাকা কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রতিবাদ করেছে। এনিয়ে চার দফা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ঢাকা তার প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে এই প্রতিক্রিয়া শেষে মিয়ানমার নিয়ন্ত্রিত হলে তো ভালো, না হলে কী করনীয় এনিয়ে নিশ্চয়ই ভাবছে সরকার।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে হতাহতের যে ঘটনা সেটা ছোটখাটো বিষয় নয়। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। সরকার এখানে নমনীয় হলে মিয়ানমারের স্পর্ধা আরও বেড়ে যাবে সন্দেহ নেই। এর প্রতিক্রিয়া এখনও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে রয়ে গেছে, তবে সময় এসেছে নিশ্চয়ই এটাকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে তোলার।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দৃশ্যত কোন বিরোধ নেই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়; এই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা। এক মিলিয়নের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটি তাদের সেই নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হচ্ছে না। বাংলাদেশ বারবার তাগাদা দিলেও তারা সেটা অবজ্ঞা করছে। এরবাইরে আর কোন সমস্যা নেই তাদের সঙ্গে। যদিও রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না দেশটি। তাদের সেই অস্বীকার একতরফা। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখানে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারছে না, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শুরু থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিশ্বনেতারা। এমনকি আঞ্চলিক নেতারাও। ভারত কিংবা চীন এ দুদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক থাকলেও তারা রহস্যজনকভাবে এ বিষয়ে নীরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে ভারতের সহযোগিতার ব্যাপারে ইতিবাচক আশ্বাস মেলেনি। সীমিত সামর্থ্যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গ বিভিন্ন ফোরামে তুললেও কোথাও থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। এখন যখন বারবার এই প্রসঙ্গ ওঠছে তখন মিয়ানমারের হঠাৎ করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিষয়টি গুরুত্বহীন করে দেওয়ার দুরভিসন্ধি কি নয়?