মরণ ফাঁদের নির্মাণকাজ
একটি রাস্তা একবার তৈরি হয়ে গেলেও বিভিন্ন কারণে সেই রাস্তায় অনেক নির্মাণ, পুনরায় নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়। একটি নতুন রাস্তা তৈরি করার সময় যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় তার চাইতেও বেশি সাবধান হতে হয় যানবাহন চলাচল করছে এমন রাস্তায় কোনো প্রকার নির্মাণ কাজ করতে গেলে।
২০১২ সালে প্রকাশিত ‘Road Safety at Works Sites on Indonesian Roads’– শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয় যে, সড়কে নির্মাণ কাজ চলছে এমন স্থানে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি একই রকম অন্য একটি সড়কের চাইতে তিনগুণ বেশি। কেন এমনটি বলা হচ্ছে তা ভেবে দেখা দরকার।
যানবাহন চলাচল করছে এমন একটি রাস্তায় বা তার পাশে যদি কোনো প্রকার খনন বা নির্মাণ কাজ করা হয় তখন প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে ঐ রাস্তায় চলাচল করছে এমন যানবাহন ও পথচারীদের নিরাপদে ঐ স্থান অতিক্রম করার ব্যবস্থা করা। এজন্য যেকোনো নির্মাণাধীন কাজের স্থানে লেখা থাকে ‘সেফটি ফার্স্ট’।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশ এই মূলনীতি কঠোরভাবে পালন করলেও আমাদের দেশে নির্মাণকাজ এলাকায় ‘নিরাপত্তা’ এখনো পর্যন্ত গুরুত্বহীন একটা বিষয়।
নির্মাণকাজ চলমান এলাকায় বা নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, নির্মাণ সামগ্রী বা এই সংশ্লিষ্ট উপাদান যে কতটা বিপদজনক হতে পারে তার প্রথম প্রমাণ আমরা পাই ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর শাজাহানপুর রেল কলোনিতে।
নলকূপের জন্য খননকৃত কয়েকশ ফুট গভীরতার পরিত্যক্ত পাইপে ৪ বছরের শিশু জিহাদ যখন পড়ে গেল আর তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তাকে বের করে আনা হলো। সেই ২৪ ঘণ্টা পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তাকিয়ে ছিল একটা সুখবর পাওয়ার আশায়।
দুর্ভাগ্য আমাদের সেদিন কোনো সুখবর পাইনি এবং তার চাইতেও বড় দুর্ভাগ্য, সেই ঘটনা থেকে আমরা কোনো শিক্ষাও নিলাম না। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখলাম চট্টগ্রামে খোলা ম্যানহোলে শিশু পড়ে নিখোঁজ হতে, আমরা দেখলাম কয়েকবার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের অংশবিশেষ ধসে পড়তে।