অমানবিক
মধ্যরাতের সন্তান আক্রান্ত। বিশ্বখ্যাত লেখক সলমন রুশদির উপর অতর্কিতে নৃশংস আঘাত নেমে এল ১৫ অগস্ট মধ্যরাতের তিন দিন আগেই, নিউ ইয়র্কের এক সভাস্থলে। কুড়ি সেকেন্ড ধরে তাঁর উপর ছোরার কোপ। আজ পাঁচ দিন পরও তাঁর আরোগ্য সংশয়াতীত নয়, শোনা যাচ্ছে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর শরীরযন্ত্র হয়তো আর স্বাভাবিক হবে না, তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, হয়তো কথাও আর বলতে পারবেন না।
এই ঘটনার ‘দৌলতে’ বিশ্ব-ইতিহাসে যোগ হল মানবতার আর এক ভয়ঙ্কর পরাজয়, যেখানে স্বাধীনচেতা সাহসী সত্যসন্ধানী সাহিত্যিককে তাঁর সাহিত্যরচনার মূল্য চোকাতে প্রস্তুত থাকতে হয় নিজের প্রাণের বিনিময়ে। ঘৃণ্য আততায়ী যে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে রুশদির ভাবনা ও বক্তব্যের কারণেই এই আঘাত হেনেছে, সন্দেহের অবকাশ নেই। সন্দেহ নেই যে, এই কাজকে এক জন ব্যক্তির আকস্মিক পাগলামি কিংবা মনোবিকার বলে পাশে সরিয়ে রাখা যাবে না। মনে রাখতে হবে, গত তিন দশক ধরে রুশদি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই বাঁচতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁকে সর্বদা ঘিরে থেকেছে রক্ষীচক্ষুজাল।
সেটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর ইরানের ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেনির ফতোয়া জারির পর থেকেই এই ত্রাস তাঁকে এবং তাঁর শুভানুধ্যায়ী সমাজকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সুতরাং, তেত্রিশ বছর পরের এই আততায়ীকে কোনও ব্যক্তি না বলে, এক সম্মিলিত শক্তির মুখপাত্রই বলা যেতে পারে। কী সেই সম্মিলিত শক্তি? তার নাম— উগ্র সহিংস ইসলাম, বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে যা ছড়িয়ে আছে, কোনও ব্যক্তিপরিসরে বা কোনও মুক্তচিন্তায় যা বিশ্বাস করে না, তার নিজের কট্টর, অসংবেদনশীল বিশ্ববীক্ষা থেকে কোনও রকম বিচ্যুতি দেখলেই তাকে শাস্তি দিতে চায় তীব্র শারীরিক অত্যাচার ও নিধনের মাধ্যমে। আশ্চর্য নয় যে, এমন ঘটনার পরও ভ্রুক্ষেপ-ব্যতিরেকে ইসলামি বিশ্বের সেই কট্টর অংশের প্রতিনিধিস্বরূপ ইরানের সরকারি প্রচারমাধ্যমের কর্তা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, ‘শয়তানকে অন্ধ করে দেওয়া গিয়েছে’।