
না-লিখিয়ে সাংবাদিক
একবার প্যারিসে এক সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর। এক রেস্তোরাঁয় বসে আছেন, এক সুপুরুষ এসে অনুমতি নিয়ে বসলেন তাঁর সামনের চেয়ারে। আলী সাহেব ফরাসি ভাষা জানেন কি না, জিজ্ঞেস করলেন। আলাপ শুরু হলো।
লোকটা বললেন, তিনি সাংবাদিক, তবে না লেখার জন্য লোকে তাঁকে পয়সা দেয়। এরপর তিনি খুলে বসলেন তাঁর সংবাদের ঝাঁপি। না লিখেই কীভাবে তিনি সাংবাদিক, তার বর্ণনা করলেন।
এক ধর্মপরায়ণ রাজনীতিবিদ এক নর্তকী রমণীর সঙ্গে ঢলাঢলি করছে, এমন সংবাদ পেলেন সাংবাদিক মহাশয়। তখন সাংবাদিক সেই নর্তকীর খোঁজে লেগে পড়লেন। প্রেমের কবিতা মুখস্থ করলেন, টাঙ্গো, ওয়ালটস ইত্যাদি রপ্ত করলেন। রাজনীতিবিদের একটু খবর জানার জন্য কত যে পরিশ্রম করলেন!
একসময় নর্তকীর মন গলল, নর্তকী রাজনীতিবিদ সম্পর্কে খবরগুলো দিয়ে ফেললেন সাংবাদিককে। তিনি তো আর জানেন না, কথাগুলো বলছেন কোনো সাংবাদিককে। ভেবেছেন, লোকটা তাঁর আরেকজন প্রেমিক! কোন হোটেলে এই ধর্মভীরু রাজনীতিবিদের সঙ্গে গোপনে রাত কাটিয়েছেন, কোন ইয়টে কদিন কয় রাত্তির থেকেছেন তাঁর সঙ্গে, সব খবর জোগাড় হয়ে গেল। এবার নর্তকীর কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে পিঠটান দিলেন সাংবাদিক মহাশয়।
এবার খুবই সাদাসিধাভাবে তিনি গিয়ে হাজির হলেন রাজনীতিবিদের কাছে। বললেন, ‘নিছক সাহিত্যের খাতিরে আপনার জীবনী লিখতে চাই। তাতে ওই নর্তকীর বিষয়ে কিছু কথা থাকবে। তার প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। কিছু টাকাপয়সা পেলে আমি আর এসব ছাপব না।’
- ট্যাগ:
- মতামত
- সাংবাদিক
- রাজনীতিবিদ