আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি কবিতার পঙ্ক্তি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। পঙ্ক্তিটি হলো আসাদ চৌধুরীর: ‘তোমাদের যা বলার ছিল/ বলছে কি তা বাংলাদেশ?’
কবিতাটি ছিল একাত্তরের শহীদদের উদ্দেশে। আওয়ামী লীগ সরকার শহীদদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তারা জোর গলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও কাজ করেছে উল্টো। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া স্বর্ণপদকের সোনাও খেয়ে ফেলেছিল।
আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় নেই। রাজনীতিতেও নেই। কিন্তু রাষ্ট্র ও প্রশাসনের প্রায় সবখানে ‘আওয়ামী ধারা’ বহাল আছে। চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া দুজন উপদেষ্টার পিএস ও এপিএসের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে।
জনপ্রশাসনে কার কর্তৃত্ব ও খবরদারি বেশি, সেসব নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দুজন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেক জায়গায় প্রশাসন এখন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। তাই এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বিএনপির পাল্টা অভিযোগ, প্রশাসনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদেরই সখ্য সবচেয়ে বেশি।
বৃহস্পতিবার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মরণসভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সচিবালয়ের ৯০ শতাংশই ফ্যাসিবাদের দোসর। তাদের দিয়েই বর্তমানে দেশ চলছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরেই সবকিছু দখলে রেখেছিল। পেশাজীবী সংগঠন থেকে বিচারালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাঠপর্যায়ের প্রশাসন। গণপরিবহন থেকে সরকারি সম্পদ। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার পর কি সেসব স্থান শূন্য থেকেছে? মোটেই না। কয়েক দিন আগে দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলা শহর থেকে কয়েকজন আইনজীবী এসেছিলেন তাঁদের দুঃখের কথা জানাতে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তাঁদের বিএনপি–জামায়াতের লোক বলে নানাভাবে নাজেহাল করা হতো। ক্ষমতার পালাবদলের পর বিএনপি–সমর্থিত আইনজীবীরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং বিরোধীদের স্বৈরাচারের দোসর বলে হয়রানি করছেন। অনেককে চেম্বারেও বসতে দিচ্ছেন না। আইনজীবী সমিতির নেতারা অনেকে পলাতক। এই অবস্থায় সাধারণ আইনজীবীরা নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচন করতে রাজি নন। তাঁরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চান। কিন্তু পেশাজীবী সংগঠনের নয়। কেননা ইতিমধ্যে তাঁরা সেখানে অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
আগে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামী লীগ। এখন তাদের অনুপস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কেউ নেই। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দফা আলোচনায় মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত হতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে পারবে, সেই ভরসাও কম।
২ মে এনসিপির নেতারা সমাবেশ করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার শেষ করার আগে এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তাঁরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি ৫ বা ১০ বছর সময় লেগে যেতে পারে। তাহলে কি ১০ বছর নির্বাচন হবে না?’ প্রতিদিন নতুন নতুন সংস্কারের তালিকারও সমালোচনা করেছেন বিএনপির এই নেতা।