রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অভাবিত কিছু ছিল না। বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় পেছাবে, এটাই অনুমান করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাঁরা নজরে রাখেন, তাঁরা এবং যাঁরা সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা কী, সেটা পর্যবেক্ষণ করেন, তাঁরা এমনটাই আশঙ্কা করছিলেন। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়েছে। গত বছর ছিল ১৫২, এ বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১৬২। আরএসএফ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দিকে নজর রাখে। এ বছরের র্যাঙ্কিং করা হয়েছে ১৮০টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে।
এ বছর ১০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ স্কোর হচ্ছে ৩৬ দশমিক ৬৩। এক বছরে এ স্কোর কমেছে ১৩ দশমিক ২৬। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার এত দ্রুত অবনতি ঘটেছে খুব কম দেশেই। যেসব দেশ নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করে, তাদের পাশাপাশি রাখলে সহজেই ভয়াবহ রকমের পতনের বিষয়টি বোঝা যায়। এ অবস্থান বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার তালিকায় সবচেয়ে নিচেই রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার এ পতনের বিষয় উপলব্ধি করার জন্য কেবল গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না, গত এক দশকের ধারাবাহিকতার মধ্যে তাকে আনতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের বোঝা দরকার, এ পরিসংখ্যান কোন বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্রমাবনতির কারণগুলো আলোচনা ছাড়া এ তালিকা ও পরিসংখ্যান নিয়ে কথাবার্তা বা ক্ষোভ প্রকাশ এ অবস্থা বদলের কোনো পথে দেখাতে পারবে না।
আরএসএফের গত বছরগুলোর হিসাবে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৭। পরবর্তী বছরগুলোয় এ স্কোর কমেছে। সামান্য উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আর কখনোই ২০১১ সালের জায়গার ফিরে আসেনি। ২০২২ সালে যখন আমরা মোট স্কোর ৩০ দশমিক ৬৩টি উপস্থিত হতে দেখি, তখন আমাদের স্মরণ করা দরকার, এটি প্রায় এক দশক আগের চেয়ে ২৬ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কম।
খুব মোটাদাগে বললে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবাদক্ষেত্র যতটা স্বাধীনতা ভোগ করত, এখন তার অর্ধেকও ভোগ করে না। বাংলাদেশের সংবাদক্ষেত্র ২০১১ সালেও ছিল অনেক বেশি শৃঙ্খলিত। সেখান থেকে যখন তা অর্ধেকে নেমে আসে, তখন এটা বোঝা দুরূহ নয় যে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ২০১১ সালকে এ বিবেচনার সূচনা বা ভিত্তিবর্ষ হিসেবে বিবেচনার দুটি কারণ আছে।