‘বিশ্বযুদ্ধ’ এড়াতে কি পুতিনের আগ্রাসনকে মেনে নিতে হবে
কয়েক মাস আগের কথা, আমরা অনেকেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম রাশিয়া–ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন চালাবে কি না। দীর্ঘদিন রাশিয়া নিজের সীমান্তে বিপুল সৈন্যসমাবেশ করছিল, করছিল বেলারুশের মাটিতেও। পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার একটি সর্বাত্মক আগ্রাসনের প্রায় নিশ্চিত পূর্বাভাস দিচ্ছিল, তখন আমাদের অনেকেরই সেটা ভালো লাগেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাভাসকে বাদ দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের কথায় আস্থা রাখতে চেয়েছিলেন অনেকেই।
পুতিন বলছিলেন, তিনি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছেন না, নিজ সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক মহড়া চালাচ্ছেন, যার অধিকার তাঁর আছে। তাঁর এ বক্তব্যকেই যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছিলেন অনেকে। এখন রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসনের দুই মাসের বেশি পার হয়ে যাওয়ার পর সেই মানুষগুলো ইনিয়ে-বিনিয়ে সেই আগ্রাসনকে আবার সমর্থন করছেন। তবে এ ঘটনায় বোঝা গেল পুতিনের দেওয়া বক্তব্যে আস্থা রাখার কিছু নেই।
কিছুদিন আগেই ঘটা করে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হলো, রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের ওপর অভিযান সমাপ্ত করে তারা পূর্বের দনবাস অঞ্চলে তাদের অভিযান সীমিত করবে। কিন্তু সামরিক কৌশল বিশ্লেষকেরা অনুমান করেছিলেন, রাশিয়া আসলে দনবাস এলাকা থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত একটি স্থল করিডর প্রতিষ্ঠা করবে। এই করিডরের মধ্যে পড়া মারিউপোল দখলের জন্য রাশিয়ার বীভৎস এবং মরিয়া চেষ্টা দেখেই এটা অনুমান করা যাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি রাশিয়ার ভিন্ন কিন্তু আরও বড় একটি লক্ষ্যের কথা জানান একজন জেনারেল।
রাশিয়ান জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ কয়েক দিন আগে সে দেশের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে জানান, দনবাস থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত অঞ্চল নয়, বরং ইউক্রেনের পুরো দক্ষিণাঞ্চল দখলে নিতে চান তাঁরা। এবং এর কারণও তিনি জানান, এটা করা গেলে ইউক্রেন ও মলদোভার মধ্যে অবস্থিত ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় সরাসরি যাওয়ার পথ খুলে যাবে। সচেতন পাঠক নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন, এটা করার জন্য রাশিয়ার বয়ানটা কি? হ্যাঁ, রুশ বংশোদ্ভূত মানুষকে রক্ষা করা। ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় জাতিগত রুশের সংখ্যা (২৯ শতাংশ) দ্বিতীয় স্থানে থাকা মলদোভানদের চেয়ে সামান্য বেশি। এখানে ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যাও অনেক (২৩ শতাংশ)।
পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া সম্পর্কে কয়েকটি কথা জেনে নেওয়া যাক। ইউক্রেন–মলদোভার সীমান্তে অবস্থিত চার হাজার বর্গকিলোমিটারের কিছু বেশি আয়তনের, চার থেকে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার (সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না) ভূখণ্ডটি এখনো আন্তর্জাতিকভাবে মলদোভার অংশ হিসেবে স্বীকৃত। মাত্র তিনটি অঞ্চল—আবখাজিয়া, দক্ষিণ ওসেটিয়া, আর্টসাখ, যারা আদতে কোনো স্বীকৃত দেশ নয়, সেগুলো এ অঞ্চলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম দুটি রাশিয়ার সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল। তবে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি কার্যত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মতোই। এখানে একটি সংসদ, সরকার, পুলিশ, মুদ্রা সবই আছে।