মানবিকতার পুনরুত্থান হোক
আজ যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থানের স্মরণোৎসবের দিন। সব খ্রিস্টধর্মাবলম্বী আজ মৃত্যু থেকে খ্রিস্টের পুনরুত্থান উদযাপন করছে। খ্রিস্টের পুনরুত্থান খ্রিস্টধর্মের নির্ভরবিন্দু, যা না ঘটলে খ্রিস্টধর্ম প্রতিষ্ঠিত হতো না। ধর্মীয় চিন্তায় একটা চিরন্তন প্রশ্ন আছে, ‘ঈশ্বরের কাছে মানুষ কি প্রকারে ধার্মিক হতে পারে?’ বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত ‘ইয়োব’ নামের পুস্তকটিতে মহামতি ইয়োবের এ প্রশ্ন ছিল (ইয়োব ৯ঃ২, ২৫ঃ৪)।
একমাত্র পবিত্র ও ধর্মময় ঈশ্বরের সাক্ষাতে কোনো মানুষ নিজের কোনো কিছুরই বলে ধার্মিক হতে পারে না। ধার্মিকতা মানুষের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহের দান। তা অর্জনযোগ্য কিছু নয়, কিন্তু বিশ্বাসীর জন্য বিনা মূল্যে ঈশ্বরের অনুগ্রহের দান। ঈশ্বরের চরিত্রের প্রধান কথা—তিনি অতীব পবিত্র ও ন্যায়বান। তিনি পাপাচার সহ্য করেন না; পাপের দণ্ড হতেই হবে। কিন্তু তিনি প্রেমময় বলে মানুষকে পাপের দণ্ড থেকে পরিত্রাণ করার উদ্দেশ্যে তাঁর একজাত নিষ্পাপ পুত্রের ওপরে মানুষের পাপের দণ্ড বর্তালেন। তার ফলে হলো যিশুর ক্রুশীয় মৃত্যু। আর যিশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর প্রসঙ্গ ও তাঁর পুনরুত্থান যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ক্রুশে তিনি ছিলেন আপাত এক পরাজিত সৈন্য, কিন্তু পুনরুত্থানে তিনি হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী বিজয়ী বীর!
জগতের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন তত্ত্বের দ্বারা মানুষের অনেক বৈষয়িক উন্নতি হলেও তার মাধ্যমে পাপ ও তার শৃঙ্খল থেকে প্রকৃত মুক্তি ঘটে না। যত জাগতিক জ্ঞান, ততই যেন জ্ঞানপাপীর সংখ্যার বৃদ্ধি! এ জগতের জ্ঞানের দ্বারা মানুষের আত্মার মুক্তি হয় না বলে ঈশ্বর এ জগতে তাঁর স্বর্গীয় প্রেমে তাঁর একজাত পুত্রকে প্রদান করলেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত—বলিরূপে।
মানুষের দুঃখে ঈশ্বর দুঃখিত হন, মানুষের ক্রন্দন যে ঈশ্বরেরই ক্রন্দন। ক্রুশের কথা মানবমুক্তির পরিকল্পনার মূল এক কথা। মানবসভ্যতার ইতিহাসে অভিশপ্ত সব ক্রুশের মধ্যে খ্রিস্টের সেই ক্রুশটি পরিণত হয়েছে খ্রিস্টধর্মের সর্বজনীন প্রতীকে। কেন? তার উত্তর : পাপী মানুষের জন্য পবিত্র ঈশ্বরের প্রেম। ক্রুশের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর প্রেমকে প্রকাশ করেছেন। তাঁর ধার্মিকতা ও ন্যায্যতাকে দেখিয়েছেন। এভাবেই ঈশ্বর পাপী মানুষকে ক্ষমা করেছেন এবং তিনি পাপী মানুষের সঙ্গে সম্মিলিত হয়েছেন। ক্রুশের ওপরই নিষ্কলঙ্ক প্রভু যিশু মানুষের পাপ মোচনের কাজ সম্পন্ন করেন। খ্রিস্টের ক্রুশীয় মৃত্যুতে ঈশ্বরের পবিত্রতা ও ন্যায্যতার মানদণ্ড রক্ষিত হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে মানুষের প্রতি তাঁর প্রেম। কুমারীর গর্ভে পবিত্র আত্মার শক্তিতে জাত নিষ্পাপ যিশুর আত্মদান পাপের পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য যজ্ঞ। নিজে নিষ্পাপ বলেই খ্রিস্ট অন্যের পাপ বহন করতে পেরেছেন। সাধু পৌলের কথায়, ‘যিনি পাপ জানেন নাই তাঁকে তিনি (ঈশ্বর) আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করিলেন যেন আমরা তাহাতে ঈশ্বরের ধার্মিকতাস্বরূপ হই’ (২ করিন্থীয় ৫ঃ২১)। প্রসঙ্গত বাইবেলের শিক্ষায় ধার্মিকতার অর্থ ন্যায্যতা। মানুষের মধ্যে ন্যায্যতার আচরণ তাই সবচেয়ে বড় এক ঐশ্বরিক আহবান। সমাজে যদি ন্যায্যতা না থাকে তাহলে অসার সব ধর্মকর্ম।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইস্টার সানডে