বৈষম্য বাড়বে কিন্তু দূর করা চাই
যাকে আমরা অগ্রগতি বলি, অন্য একটি ব্যাপার হলো উন্নতি- এ দুইয়ের ভেতর পার্থক্য যে রয়েছে, সেটি তো অস্পষ্ট নয়। অগ্রগতি মানে হলো সামনের দিকে চলা আর উন্নতির অর্থ ওপরের দিকে ওঠা। দুইয়ের ভেতর মিলেরও একটা জায়গা বিদ্যমান। সেটি হলো বৈষম্য। অগ্রগতি মানেই যে সবাই সমানতালে এগোতে পারছে, তা নয়। কেউ এগোচ্ছে, কেউ পিছিয়ে পড়ছে- ঘটনা এ রকমেরই। আর উন্নতি যদি হয় ওপরের দিকে ওঠে, তা হলে তো ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবেই বৈষম্যমূলক। সবাই তো ওপরে উঠতে পারবে না। জায়গা হবে না সবার জন্য।
এখন আমরা অগ্রগতির চেয়ে উন্নতির কথাই বেশি বেশি বলছি। ধারণাগুলো তো ইংরেজি ভাষাতেই আছে- অগ্রগতি হলো প্রগ্রেস আর উন্নতি হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট। যুগটা এখন যতটা না প্রগ্রেসের, এর চেয়ে বেশি ডেভেলপমেন্টের। তা উন্নতি আমরা চাই বৈকি। উন্নতি খুবই প্রয়োজন। স্থিতাবস্থা বলে তো আসলে কিছু নেই। উন্নতি না ঘটলে বুঝতে হবে অবনতি চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন ধরনের উন্নতি আমরা চাই। উন্নতিটা হবে খাড়াখাড়ি পাহাড়ের মতো, নাকি অন্য ধরনের? পাহাড়ের সামাজিক ভূমিকা আছে বৈকি। সে মেঘকে থামিয়ে দিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়, বরফ জমিয়ে ঝরনার সৃষ্টি করে। কিন্তু উন্নতি যদি পর্বতপ্রতিম হয়, তা হলে তো ভীষণ বিপদ। কেননা পর্বত তো হৃদয়হীন। সে তো পাষাণে গড়া। চতুর্দিকে আজ যে উন্নতি দেখছি, সেটি ওই পাহাড়েই মতোই; ক্ষেত্রবিশেষে সে জগদ্দল পাহাড়ই। উন্নতির পাহাড়গুলো দূরের নয়, খুবই কাছের। এগুলো মানুষের বুকের ওপর, ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে। অনুন্নত মানুষের দশাটা এখন পাহাড়ে মাথা ঠোকার মতো।