
করোনার কারণে সংঘটিত লকডাউনের পর এখন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে উত্থান ঘটিতেছে বলিয়া মনে করা হইতেছিল। কিছুদিন পূর্বে রয়টার্সের এক জরিপে জানা গিয়াছে, এই বত্সর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে এতটাই হাওয়া লাগিবে যে, ১৯৭০ সালের পর যাহা নাকি আর দেখা যায় নাই! উত্তম কথা। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতির পালে হাওয়ার পরিবর্তে ঝড়ও বহিয়া যাইতে পারে। তাহার কিছু আলামত বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখিতে পাইতেছেন। ইতিমধ্যে ভূরাজনৈতিক কারণ, কয়লার উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং রাশিয়া ও চীনের মজুতদারি জ্বালানিসংকটকে তীব্র করিয়া তুলিয়াছে। গ্যাস, কয়লা ও তেলের চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়িয়াই চলিতেছে। বেশ কিছুদিন ধরিয়া স্মরণকালের ভয়াবহ কয়লাসংকটে পড়িয়াছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। ইহাতে চীনের কয়েকটি প্রদেশে ব্যাহত হইতেছে বিদ্যুত্ সরবরাহ। বাধাগ্রস্ত হইতেছে শিল্প উত্পাদনও। চীনের কয়লা আমদানিতে বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছে অস্ট্রেলিয়া। চলতি সপ্তাহে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইম’ জানাইয়াছেন, চীন-অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য উন্নয়নে চীনের জ্বালানিসংকট সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখিবে। একই রকম অবস্থার মধ্য দিয়া যাইতেছে ইউরোপও। সেইখানে গ্যাসের মূল্য বাড়িতেছে। জানুয়ারির তুলনায় ২০০ শতাংশ বাড়িয়াছে বিদ্যুতের মূল্য। একই সঙ্গে সারা বিশ্বে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাইতেছে লাগামহীনভাবে। শিল্পোত্পাদনের সহিত সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে ভাবিতে হইতেছে, তাহারা উত্পাদন অব্যাহত রাখিবে, নাকি নাগরিকদের ভালো রাখিবে! ডিসেম্বরে বড়দিনের জন্য উত্পাদন যতখানি বৃদ্ধি করা হইয়াছে, ততখানি বিতরণ সম্ভব হইবে কি না তাহাও নূতন করিয়া দুশ্চিন্তা তৈরি করিতেছে।