ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবার বাংলা ভ্যারিয়েন্ট হয়ে যেতে পারে!
ইউকে ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ করার ক্ষমতা মূল ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছিলেন, নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, করোনার মূল স্ট্রেইনের চেয়ে এটি ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
হঠাৎ করোনার এমন ‘জেদের’ সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না দেশের হাসপাতালগুলো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এসেই গেছে। এ কারণে এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। যেহেতু বেশি মানুষ সংক্রমিত হবে, তাই বেশি আইসিইউ বা অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে।
আমাদের দেশেও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর সাহা। তিনি বলেন, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু পরিমাণটা বের করতে পারছি না। কারণ দেশে যথেষ্ট সিকোয়েন্সিং হচ্ছে না। তবে এটা বলতে পারি, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আছে এবং বেশ ভালো পরিমাণেই আছে।’
করোনা পরীক্ষার চাপ বাড়ছে
দেশের বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষার চাপ বাড়ছে। পরীক্ষার পাশাপাশি নতুন রোগী ও শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। কয়েক দিন ধরে রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ঘরে। অবশ্য এখন দৈনিক যে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার একটি বড় অংশ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান ঘিরে। এর বাইরে আছেন অনেক বিদেশযাত্রী।
দেশে করোনার ৩৪ নতুন জিনগত মিউটেশন
করোনাভাইরাস ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে চার হাজার ৬০৪ বার মিউটেশন বা রূপ পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে ৩৪টি রূপ একেবারেই নতুন। অর্থাৎ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই রূপগুলো পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের গবেষকরা মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে ৩৭১টি জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোগী বাড়ছে, হাসপাতাল প্রস্তুত তো?
দেশে ১৮ থেকে ১৯ মার্চ করোনায় মারা গেছেন ১৮ জন। শনাক্ত এক হাজার ৮৯৯ জন। করোনা রোগী প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। শীতের সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থাকলেও রোগী শনাক্তের হার ছিল নিম্নমুখী। ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯২ শতাংশ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল দুই দশমিক ৬৮ শতাংশ, ১৯ ফেব্রুয়ারি দুই দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে শীতের শেষে আবার বাড়তে শুরু করেছে রোগী।
করোনার টিকা নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন
১. করোনার টিকা নেওয়া কি নিরাপদ? এ প্রশ্ন এখনো অনেক মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। টিকা দেওয়া শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রেও মানুষের মধ্যে টিকা নিতে ইতস্তত ভাব দেখা দিয়েছে। সিবিএসের এক নতুন জরিপে দেখা যায়, রিপাবলিকানদের এক-তৃতীয়াংশ টিকা নিতে চায় না, আরও ২০ শতাংশ টিকা নেবে কি না, নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি। ডেমোক্র্যাটদের ১০ শতাংশ টিকায় অনীহা দেখিয়েছে। আগের জরিপেও প্রায় এ রকমই মতামত এসেছিল। অথচ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ক্ষমতাসীন থাকার শেষ দিকে চুপেচাপে টিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টিকে উৎসাহিত করেননি। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিষিদ্ধ করেছিল। সে তুলনায় আমাদের দেশে বরং প্রশ্ন কম। একেবারে যে নেই, তা নয়। কিন্তু উৎসাহের অভাব রয়েছে। যদিও বিশ্বের সেরা ভাইরোলজিস্ট ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিকা নেওয়ার কারণে বিচ্ছিন্ন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও সেটা তেমন কিছু না। করোনার টিকা নিরাপদ বলে তাঁরা নিশ্চিত করেছেন।
করোনায় আক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) ডা. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনার সংক্রমণ তিন কারণে ঊর্ধ্বমুখী
মূলত তিনটি কারণে দেশে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে উষ্ণ আবহাওয়া। স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে অবাধ চলাফেরাও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখছে। অবশ্য জেনেভার বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এক প্রতিবেদনে বলেছে, আবহাওয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের ব্যাপকতার সম্পর্কটি এখনো স্পষ্ট নয়। ভবিষ্যতে মৌসুমি রোগ হিসেবে কোভিড-১৯ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।