‘অন্ধকার দুঃসময় থেকে আবার আলোর পৃথিবীতে ফিরে এসেছি’
চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে অবস্থিত গারটেক্স গার্মেন্টের কমার্শিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার ওমর আলী (৫০) গত ৮ এপ্রিল করোনাভাইরাস আক্রান্ত হন। এর এক সপ্তাহ পর তাঁর ৬ সদস্যের পরিবারের আরও ৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে। শুধু পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য সাড়ে ৩ বছরের মেয়েটি বেঁচে যায় করোনার ভয়াল থাবা থেকে। তবে এই পরিবারের করোনা আক্রান্ত ৫ সদস্যই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সর্বশেষ সোমবার পর পর দুটি নমুনা পরীক্ষায় করোনা উপসর্গ না থাকায় মেয়ে সামান্থা আকতার হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়েছেন। করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা পরিবারের অপর সদস্যরা হলেন- ওমর আলীর স্ত্রী শামীমা আকতার (৪২), বড় ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৪), মেঝো ছেলে হুমায়ুন আহমেদ (২২) ও মেয়ে সামান্থা আকতার ((১৮)। বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও পুরো পরিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় স্বস্তি প্রকাশ করে রাতে ওমর আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার পর যেদিন আমার পরিবারের বাকী সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হলেন সেদিন আমার মনে হয়েছিল আমরা পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছি। তারচেয়েও বড় দূর্ভাবনা ছিল পরিবারের একমাত্র সুস্থ সদস্য আমার সাড়ে তিন বছরের ছোট মেয়ে ইক্বরা কার জিম্মায় থাকবে? কারণ সে মা ছাড়া একমুহুর্তও কোনদিন কোথাও থাকেনি। তাছাড়া যার পরিবারের সবাই করোনা আক্রান্ত তাকে কেইবা রাখবে?’ সেই সময়ে ত্রাতার ভূমিকা নিয়ে আসেন শ্যালক সেলিম। ঝুঁকি জেনেও ইক্বরাকে নিজের জিম্মায় রাখলেন। এদিকে হাসপাতালে তখন পুরো পরিবারের সুস্থ হওয়ার লড়াই। প্রথমেই গত ২২ এপ্রিল সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের সরাইপাড়ার বাসায় ফিরলেন ওমর আলী। পরদিনই স্ত্রী ও মেয়ের করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার সুখবর পান। কিন্তু ২৬ এপ্রিল আরেকটি নমুনা পরীক্ষায় স্ত্রী ও দুই ছেলের নেগেটিভ আসলেও এবার মেয়ের নমুনার ফলাফল আসে পজিটিভ। দুঃশ্চিন্তার মধ্যেও অষ্টাদশী মেয়েকে হাসপাতালে রেখে বাসায় ফেরেন মা ও তাঁর দুই ছেলে। সেই থেকে প্রতিদিনই রূদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা মেয়ের সুস্থতার জন্য।