
ছবি সংগৃহীত
১০ বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ গান লিখেছি: রবিউল ইসলাম জীবন
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ০৭:১৯
রবিউল ইসলাম জীবন। ছবি: সংগৃহীত
(প্রিয়.কম) রবিউল ইসলাম জীবন। বর্তমান সময়ের তরুণ উদিয়মান একজন গীতকার। তার লেখা গান গেয়েছেন দেশের সব নাম করা কণ্ঠশিল্পী। সেই সুবাদে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের অনেক শিল্পীই গেয়েছেন তার লেখা গান। অনেক গানই হয়েছে শ্রোতাপ্রিয়। এই সময়ের জনপ্রিয় সেই গীতিকার সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রিয়.কম এর প্রিয়কথা বিভাগে।
প্রিয়.কম: নতুন বছরের শুরুতে প্রকাশিত আপনার লেখা ‘আলো-ছায়া’ গানটি ইউটিউবে দারুণ সাড়া ফেলেছে। গানটি সম্পর্কে কিছু বলেন।
জীবন: এই গানটির শিল্পী ইমরান ও নবাগত তাহসিন। ইমরান গানটির সুর ও মিউজিক রেডি করে আমাকে ডাকে। সুরের ওপর কথাগুলো বসাই। সুরটি খুব সহজ কিন্তু শুনতে আরাম। দুজন গেয়েছেনও বেশ ভালো। ভিডিও নির্মাণ করেছেন চন্দন রায় চৌধুরী। প্রকাশ করেছে সিডি চয়েস। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি গান দিয়ে বছরের শুরু করতে পারায় ভালো লাগছে।
প্রিয়.কম: বছরের প্রথম দিন তো আপনার লেখা ‘মন খারাপের আকাশ’ শিরোনামে আরেকটি গানের ভিডিও এসেছে। যাতে কণ্ঠ দিয়েছন কলকাতায় জনপ্রিয় গায়িকা ইমন চক্রবর্তী।
জীবন: ছবিতে ইমন চক্রবর্তীর গাওয়া ‘তুমি যাকে ভালোবাসো’ গানটি আমার ভীষণ প্রিয়। আমার এই গানটিও তিনি দারুণ গেয়েছন। গানটির সুর ও সংগীত করেছেন জয় শাহরিয়ার। ভিডিও বানিয়েছেন বর্ণ চক্রবর্তী। প্রকাশ করেছে আজব রেকর্ডস। এরইমধ্যে শাফিন আহমেদ সহ অনেকেই গানটির প্রশংসা করেছেন।
প্রিয়.কম: আপনার বেস্ট ভিউ ইউটিউব লিরিক কোনটি?
জীবন: ২০১২ থেকে ২০১৫ এই সময়ে আমার লেখা অনেক গানেরই ভিডিও হয়েছে। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সেসব গান ইউটিউবেও বেশ সাড়া ফেলে। কিন্তু তখন ইউটিউবের বিষয়গুলো আমরা এতো বুঝতাম না। ফলে একই ভিডিও অনেক লিংকে পাওয়া যেতো। যে যার মতো আপলোড করতো, আবার নামিয়ে ফেলতো। না হলে আমার লেখা কোনো কোনো গান কোটি ভিউয়ারও ছাড়িয়ে যেতো! ২০১৬ সালে হিসাব পক্রিয়ায় আসার পর থেকে আমার লেখা প্রায় ২০ টি গান ২০ লাখ বা তার বেশি ভিউয়ার ছাড়িয়েছে। তবে এই মূহুর্তে সর্বোচ্চ ৩৪ লাখ ভিউয়ার ইমরানের গাওয়া ‘নিশিরাতে’ গানটির।
প্রিয়.কম: গত বছর জিপি মিউজিকে সর্বোচ্চ স্ট্রিম হওয়া ১০০ গানের মধ্যে আপনারই লেখা ১৫টি। তার মানে আপনার গানগুলো শ্রোতারা ভালো ভাবেই গ্রহণ করছে, এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
জীবন: জিপি মিউজিকের শ্রোতা আর সাধারণ শ্রোতার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। একই গান বাইরে হিট আবার জিপি মিউজিক লিস্টে নাও থাকতে পারে। আবার জিপিতে হিট হয়েও বাইরে কম শোনা যেতে পারে। জিপি মিউজেকের বছরের সেরা ১০০ গানের ১৫টিই আমার লেখা। গানগুলো হলো ১১. ছিলে আমার-তাহসান ১২. বলছি শোনো-তাহসান ১৯. মন কারিগর-তাহসান ৩৬. দিন যায় রে-পান্থ কানাই ৪৪. কেউ না জানুক-তাহসান ৫৩. দেয়ালে দেয়ালে-মিনার ৬২. বলি আবার-আর্নিক ৬৪. কত যে খুঁজেছি তোমায়-বালাম ও জুলি ৬৫. বলো কবে দেখা হবে-ইমরান ৬৬. তুমি চোখ মেলে তাকালে-ইমরান ও ঐশী ৭৬. কি করি-মিনার ৮৬. বাউন্ডুলে-মিনার ৮৭. শোনো তুমি-ইমরান ৯০. নিশিরাতে-ইমরান এবং ৯৫. দৃষ্টির সীমানায়-রমা। এটা অবশ্যই আনন্দের একটি বিষয়। তবে আমি এই আনন্দে গা ভাসিয়ে থেমে থাকতে চাই না।
রবিউল ইসলাম জীবন। ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়.কম: এগুলোর বাইরেও তো গত বছর আপনার লেখা বেশ কিছু গান শ্রোতারা গ্রহণ করেছে। সেগুলো নিয়ে বলুন...
জীবন: চলচ্চিত্রের গান ‘রাতভর’-ইমরান (সম্রাট), ‘কোনো মানে নেই তো’-ইমরান ও ন্যানসি (বসগিরি), ‘বলে দাও’-ইমরান ও পড়শী (সুলতানা বিবিয়ানা), ‘আমার মতন কে আছে বলো’-আকাশ সেন, ভারত (রানা পাগলা), ‘মন তোকে ছাড়া বোঝে না’-আকাশ সেন, ভারত (বসগিরি), ‘অনেক তো কথা ছিল’-জুবিন গার্গ, ভারত (প্রেমী এ প্রেমী) এবং ‘জানতে যদি চাও’-মোহাম্মদ ইরফান, ভারত (রক্ত)। অ্যালবামের গান ‘চুপিচুপি’-মিলন ও পূজা, ‘বলো সাথিয়া’-ইমরান ও বৃষ্টি, ‘অপেক্ষার পর’-শোয়েব ও পূজা, ‘জানো না তুমি জানানা’-অয়ন চাকলাদার ও আশফা, ‘ধ্রুবতারা’-তাহসান, ‘মনের পাখি বনে’-দিলরুবা খান, ‘ভালো থাকার ইচ্ছে’-শোয়েব, ‘দাগা’ ও ‘ভালোবাসি বলো না’-কাজী শুভ, ‘সাড়া দাও না’-কানিজ সূবর্ণা, ‘দূর বহুদূরে’-রমা, ‘ঘুরে ফিরে’-লুইপা, ‘মেঘলা সময়’-বেলাল খান, ‘আঁধারের বৃষ্টিতে’-রূপঙ্কর (ভারত), ‘হাঁটছি’-রূপম ইসলাম (ভারত) প্রভৃতি এবং নাটকের গান ‘ছিলে আমার’-তাহসান ও মিথিলা (কথোপকথন)।
প্রিয়.কম: ২০১৬ সালে কতগুলো গান আপনি লিরিক করেছেন?
জীবন: সব মিলিয়ে ৫০টির মতো হবে।
প্রিয়.কম: এ বছরের কাজ নিয়ে কিছু বলুন।
জীবন: এ বছর আমার কথায় ইমরান ও বৃষ্টির দ্বৈত, ইমরান ও একজন জনপ্রিয় গায়িকার দ্বৈত সহ আরো বেশ কিছু গান আসার কথা রয়েছে।
প্রিয়.কম: চলচিত্রে আপনার কতগুলো গানের লিরিক করেছেন?
জীবন: চলচ্চিত্রে প্রায় ১৫টি গানের কথা লিখেছি। এরধ্যে অর্ধেক গানই শ্রোতারা গ্রহণ করেছে।
প্রিয়.কম: আপনার লিরিক কার গলায় ভালো খেলে বলে মনে হয়?
জীবন: সত্য কথা বলতে কি আমি যখন যার জন্য গান লেখি তখন তাঁর কণ্ঠটাকে ভেবেই লেখি। চেষ্ঠা করি শিল্পীর কণ্ঠটাতে গানের কথায় কথায়ও তুলে আনতে। এই প্রজন্মের অনেক শিল্পীই আমার কথায় কণ্ঠ দিয়েছেন। সেগুলো মানুষ গ্রহণও করেছে। তবে হ্যাঁ আমার কথায় সবচেয়ে বেশি সুর করেছেন, কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান। আমাদের জুটিতে সফলতাও অনেক বেশি। কাজ করতে করতে এটা হয়ে গেছে।
প্রিয়.কম: আপনার মোট গানের সংখ্যা কতটি?
জীবন: আমি গানের কথা লিখছি ২০০২ সালের সেপ্টম্বর থেকে। আর আমার কথা মানুষ শুনছেন ২০০৭ সালের প্রথম দিন থেকে। গত ১০ বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টি গানের কথা লিখেছি।
প্রিয়.কম: এতো গানের খোরাক পান কোথেকে?
জীবন: আমি আমার আশপাশ এবং সময়টাকে পড়ার চেষ্টা করি। সেখান থেকেই রসদ খুঁজি। এছাড়া অন্যদের ভালো লেখাও কখনো কখনো আমাকে লিখতে অনুপ্রেরণা যোগায়।
রবিউল ইসলাম জীবন। ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়.কম: পুরস্কার বা স্বীকৃতি হিসেবে আপনার ঝুড়িতে কী কী এসেছে?
জীবন: বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছি। শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এখন পর্যন্ত তিনবার চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (সিটিসেল-চ্যানেল আই এবং সিম্ফনি-চ্যানেল আই) পেয়েছি। যা আমার গান রচনার ক্ষেত্রে সব সময় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
প্রিয়.কম: আপনার সাংবাদিকতা পেশার ব্যাপারে কিছু বলুন।
জীবন: ২০০৫ সালে দৈনিক সমকাল পত্রিকার ফান ম্যাগাজিনে লেখা শুরু করি। এরপর পত্রিকার বিভিন্ন পাতায় প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেছি। আর ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠর সাব-এডিটর সেবে কাজ করছি।
প্রিয়.কম: ভবিষ্যতে লেখালেখি মানে কবিতা, উপন্যাস লেখার ইচ্ছা আছে কি?
জীবন: ইচ্ছে আছে। তবে এসবের জন্য অনেক প্রস্তুতি দরকার। নিজেকে প্রস্তুত করে তবেই শুরু করতে চাই। যেহেতু গান লেখাটাই আমার কাছে মূখ্য সেহেতু সেদিকে তেমন তাড়া নেই।
প্রিয়.কম: অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কার কাছ থেকে এবং আপনার প্রিয় গীতিকার কে?
জীবন: চলার পথে অসংখ্য মানুষ, ভাই, বন্ধু আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। নাম বলে শেষ করা যাবে না। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। যে কোনো গীতিকবির ভালো লেখাই আমাকে আকৃষ্ট করে। তবে এই মূহুর্তে জুলফিকার রাসেল এবং সোমেশ্বর অলির লেখা বেশি টানছে।
প্রিয়.কম: আপনিতো ক্রিকেট নিয়ে গান লিখেছেন, আমাদের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গান আছে আপনার?
জীবন: বাংলাদেশ, স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধ, ক্রিকেট এই বিষয়গুলো আমাদের অনুপ্রেরণায় জায়গা। এগিয়ে চলার শক্তি। এসব বিষয় নিয়ে এরইমধ্যে লেখা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো লিখতে চাই। আমার লেখা দেশাত্মবোধক গান ‘জ্বলে উঠো বাংলাদেশ’ এবং ‘জয় হবেই হবে’ শ্রোতারা গ্রহণও করেছেন।
প্রিয়.কম: আপনাকে খেলার মাঠে খুব দেখা যায়, খেলোয়ার হওয়ার ইচ্ছে ছিল কী?
জীবন: ছোটবেলায় ভীষণ ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হওয়ার পাগলামীও ছিল। ক্রিকেটের প্রতি সেই ভালোবাসাটাও এখনো রয়ে গেছে। আর তাই নিয়মিত মাঠে যাই, দেশকে উৎসাহ দিই। বলতে পারেন আমার হৃদয়ের একপাশে সংগীত অন্যপাশে ক্রিকেট। এই দুইয়ের মধ্যেই জীবনের আনন্দ খুঁজে ফিরি আমি।
প্রিয়.কম: যদি প্রশ্ন করি রবিউল ইসলাম জীবন কে, এক কথায় কী বলবেন?
জীবন: (হাসি মুখে) আমি গর্বিত একজন বাংলাদেশি।
রবিউল ইসলাম জীবন। ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়.কম: বেঁচে থাকুক আপনার হাসি। ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
জীবন: ধন্যবাদ প্রিয়.কম কে। ধন্যবাদ আমার প্রান প্রিয় শ্রোতাদের। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
সম্পাদনা: গোরা