মানুষ যখন ভালোবাসতে শুরু করবে, তখনই সফলতাটা আসবে: মোশাররফ করিম

প্রথম আলো প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫০

যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে ‘৮ম বেঙ্গলি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ডালাস ২০২৫’-এ প্রদর্শিত হবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আবর্ত-দ্য সার্কেল’। মাহমুদুল হাসান টিপু পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। এর বাইরে সম্প্রতি সিরিজ ও চলচ্চিত্র ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, ‘২ষ’, ‘চক্কর ৩২০’, ‘ইনসাফ’ দিয়ে আলোচনায় এই অভিনয়শিল্পী। এসব নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনয়শিল্পী।


‘আবর্ত-দ্য সার্কেল’ যুক্তরাষ্ট্রে বেঙ্গলি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ডালাস উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে—খবর যখন প্রথম পেলেন, ঠিক কেমন অনুভূতি হয়েছিল?


মোশাররফ করিম : একটু এক্সাইটেড এই কারণে হয়েছি, কাজটি ছিল নিরীক্ষাধর্মী। আমরা সবাই একটা টিম হয়ে কাজটা করেছি। উৎসবে পাঠাবে এমন ভাবনা কাজ করার সময় ছিল না। বছরখানেক আগে কুয়াকাটায় শুটিং করেছি। কাজটা করেও আরাম লাগছিল। আমরা সময় নিয়ে, আনন্দ নিয়ে পুরো কাজটা করেছি। তবে এই কাজটা নিয়ে জুঁই (রোবেনা রেজা, মোশাররফ করিমের অভিনয়শিল্পী স্ত্রী) অনেক পরিশ্রম করেছেন, তাই মূল কৃতিত্বটা দেব তাঁকে। পরিচালক টিপুকে দেব। শুটিং শেষে দেখলামও কাজটা দারুণ হয়েছে। পরিচালক তাঁর মতো করে ছবিটি উৎসবে পাঠিয়েছেন। কদিন আগে আমাকে যখন জানাল, তখন আমি বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলাম। ভেবেছি, সৎ চিন্তা থেকে একটা জিনিস নিয়ে পরিশ্রম করলে তার ফলাফল আছেই, এটাই মনে হয়েছে।


পরিচালকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানলাম, ২৩৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা থেকে উৎসব কর্তৃপক্ষ মাত্র ৪টি চূড়ান্ত করেছে। ছবিটিতে এমন কী আছে, যা উৎসব কর্তৃপক্ষের মনে ধরেছে বলে আপনি মনে করেন?


মোশাররফ করিম : মানুষের ভাগ্য যে তার হাতে না, প্রকৃতির ওপর যে তাঁর নির্ভরশীলতা এবং প্রকৃতির ওপর তাঁর অসহায়তা—সেটাই সব সময় আমরা দেখে আসছি, বলে আসছি। কোনো কিছুতেই চূড়ান্ত কোনো ফাইট দেওয়ার মতো আমরা কেউ না। সবকিছুরই অনিশ্চয়তা আছে। এই গল্পে সেটাই একটু ভিন্ন উপায়ে বলা হয়েছে। আবর্ত একটা মেয়ের সংগ্রামের গল্প, যে গল্পে তার স্বামী মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে। অনেক দিন আর খোঁজ নেই। বেশ কয়েক বছর পরও সেই মেয়ে ভাবতে থাকে, তার স্বামী মারা গেছে নাকি বেঁচে আছে—এ নিয়ে চলে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। একবার মনে হয়, আবার যদি ফিরে আসে। এর মধ্যে আরেকজন মানুষের তার প্রতি ভালো লাগা, ভালোবাসা তৈরি হয়। কিন্তু  দ্বন্দ্বের কারণে সে তাকেও গ্রহণ করতে পারছে না। প্রকৃতি একটা মানুষকে নিয়ে গেল, কিন্তু মেয়েটা একটা জায়গায় আটকে আছে, সিদ্ধান্তহীনতার যে দ্বান্দ্বিক বিষয়টা, হয়তো উৎসব কর্তৃপক্ষের এই বিষয়টা ভালো লেগেছে।


তিন দশকের অভিনয় জীবনে মঞ্চ, নাটক চলচ্চিত্র ও ওটিটিতে অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ছবিতে আপনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা আপনার কতটা চেনাজানা ছিল? নাকি এটি ছিল একেবারেই নতুন রকম এক চ্যালেঞ্জ?


মোশাররফ করিম : আমার কাছে কোনো চরিত্রই চেনা জানা মনে হয় না। যখন সমাজের চারপাশে দেখি, তখন প্রতিটা চরিত্র নতুন মনে হয়। আসলেই নতুন। আমরা সময় নিয়ে সেই চরিত্র করতে পারি কি না, সেটা বিষয়। অধিকাংশ সময় যতটা সময় দরকার তা নিয়ে করতে পারি না। আসলে এই চরিত্রটাও নতুন। আমার জন্য চ্যালেঞ্জ যতটা ছিল, অভিনয়ের জায়গায় তার চেয়ে বেশি জুঁইয়ের জন্য ছিল। নিশ্চয় সে উতরে গেছে।



নাটক, সিরিজ ও চলচ্চিত্রে চরিত্র বাছাইয়ে এখন কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়—গল্প, নির্মাতা, না চরিত্রের গভীরতা?


মোশাররফ করিম : আমার কাছে সবগুলো। মূলত নির্মাতা ভালো না হলে সে ভালো গল্প নির্বাচন করবে না। তবে অভিনয়শিল্পীকে নিজের চরিত্রের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়, কারণ পারফর্ম তো তাকেই করতে হয়। সে ক্ষেত্রে চরিত্রটা আমার মনে লাগতে হবে। চরিত্রটা মনে না লাগলে তো পারফর্ম করতে পারব না।


অভিনয়শিল্পে আপনি এত বছর কাজ করছেন, আপনি জনপ্রিয়, সফলও। আপনার কাছে ‘সফলতা’ শব্দটার মানে কী?


মোশাররফ করিম : আমার কাছে ভালোবাসাই হচ্ছে সফলতা। রুমীর বক্তব্য ‘লাভ ইজ দ্য ব্রিজ বিটুইন ইউ অ্যান্ড এভরিথিং’। আমার কাছেও এটা খুব মনে হয়। এই জীবনে আমি যা কিছু ভালোবেসেছি, তাই আমি পেয়েছি। আর যেসব বিষয়ের প্রতি আমার লোভ কাজ করেছে, তা আমি পাইনি এবং তাতে আমার ক্ষতি হয়েছে। অথবা যেটা পাইনি ওই জিনিসটার ব্যাপারে আমি হয়তো খুব ক্রেজি ছিলাম। এখন মানুষের বড় মুশকিলই হচ্ছে, মানুষ খুবই অস্থির। পুরো বিশ্বের অবস্থাও তো তাই। মানুষকে অস্থির করে তুলছে। একটা মানুষকে কি বলা যাবে, এক দিনের জন্য আপনার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিলাম, আপনি এটা ব্যবহার করতে পারবেন না। এটার পর হয়তো সে এলোমেলো, অস্থির হয়ে যাবে। অথচ একটা মানুষের তো স্থিরতা খুব প্রয়োজন। একটা মানুষ কিছুই করছে না, শুধুই বসে আছে—সেটাও তো এই জীবনে দরকার আছে। ওই যে ধৈর্য বা স্থিরতা সেখান থেকেই তো জন্ম নেবে। মানুষ যখন স্থির না, মানুষের দৃষ্টিও তো স্থির হবে না, ফোকাসও স্থির হবে না। যখন দৃষ্টি স্থির হবে সেখান থেকে ভালোবাসার জন্ম নেবে। মানুষ যখন ভালোবাসতে শুরু করবে, তখনই মানুষের সফলতাটা আসবে।


যদি একদিন অভিনয় ছেড়ে দিতে হয়, আপনি কী নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান?


মোশাররফ করিম : ছেড়ে দিতে হয় কী, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, অভিনয়টা ছেড়েই দেব। কিন্তু আমি দেখছি এটাতে ১০-১২ দিনের বেশি থাকতে পারি না। মনে হয়, ১০-১২ দিন আগে যেটা ভাবছি সেটা ভুল ভাবছি। মনে হয়, আমি অন্য কোনো কিছু করতে পারছি না। পারব না। আমি তো উপভোগ করিও না। আমার চাকরি করতে হবে, এটা ভাবতেই পারি না। আমার আবার অন্য ক্রিয়েটিভ কাজ যেমন লেখালেখি করতে ইচ্ছা করে। সাংবাদিকতা করতেও ইচ্ছা করে। অনেক আগে থেকেই আমার মনে হয়, আমি তারিক ভাইয়ের (তারিক আনাম খান) ইন্টারভিউ নিই। এটা প্রায়ই মনে হয়। অনেক সময় হায়াত ভাইয়ের (আবুল হায়াত) ইন্টারভিউ নিতে ইচ্ছে করে, দীর্ঘ ইন্টারভিউ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও