ছবিটি প্রতীকী, ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত।

বোকা মেয়ের ডায়েরি: মৃত শিশুর দল, কিছু হায়েনা ও পায়ুপথে গাছের গুঁড়ি

রুমানা বৈশাখী
বিভাগীয় প্রধান (প্রিয় লাইফ)
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০১৮, ২৩:০০
আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮, ২৩:০০

একটি কাল্পনিক কিংবা সত্য গল্প...

মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে ঠিক মজা পাচ্ছিল না সে। এইটুকুন বুক, এই টুকুন পাছা... ধুত্তোরি! এইসব দেখা লাগে বড় পর্দায়, তাহলে না মজা! কিন্তু সুন্দর বুক-পাছা দোলায় মাগীর দল। মনে হয় বুঝি ডাকে- "আয় আয়... আমার কাছে আয়।" ডাকেই তো। না ডাকলে অমন করে কেন!

ভাবতে ভাবতে শরীর গরম হয়ে ওঠে তার। মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরে না। স্ক্রিনে বিশাল বক্ষা মেয়েটা তীব্র শীৎকার দিচ্ছে, তার পেছন দিয়ে পুরুষাঙ্গ ভরেছে সাদা চামড়ার ছেলেটা... আহা আহা... সেকি আনন্দ মেয়ের! সে অবশ্য বৌকে একদিন এমন করার চেষ্টা করেছিল, পায়ু পথে যৌনতার চেষ্টা। হারামি বেটি চিৎকার করে সরে গেছে। এইসব করলে নাকি ব্যথা লাগে! কই, পর্ন ছবির মেয়েটার তো লাগছে না...

তার বড় ইচ্ছা এইভাবে যৌন কর্ম করবে। মোবাইল স্ক্রিনে যেমন দেখায়! ফেসবুকে কিছু মেয়েকে দেখেছেও- সুন্দর সুন্দর ছবি, সাথে নম্বর দেয়া। চাইলেই তারা ফোন সেক্স করবে, লাইভে যৌনকর্ম দেখাবে, চাইলে বাস্তবেও করবে। কিন্তু তাতে টাকা লাগে। একটু আধটু না, বেশ টাকা লাগে।

... মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ সরছে না, দেখতে দেখতে পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে উঠেছে। কী করবে বুঝতে পারছে না সে... এখন ওই একই ছেলে সেক্স করছে একটা মেয়ের সাথে। ৮/৯ বছরের মেয়ে , কচি মুখ, কচি শরীর... দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে সে... অমন একটা কচি মাল...

পুরুষাঙ্গ টন টন করছে... এমন একটা মাল আজকে চাই-ই চাই...

চোখ পড়ে পাশের ঘরে... ভাতিজি খেলা করছে। কত হবে বয়স? ৬ কিংবা ৭? উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করে ওঠে তার চোখ... আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে এগোয় পাশের ঘরের দিকে। বৌ আর ভাবি বাসায় নেই, এটাই সুযোগ... কিচ্ছু হবে না, কেউ টের পাবে না, কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। ভাতিজিকে চকলেট ধরিয়ে দিয়ে পেছন দিক দিয়ে পুরুষাঙ্গটা ঢুকিয়ে দেবে। এতটুকুন মেয়ে, প্রেগন্যান্ট হবার ভয় নাই, বুঝতেও পারবে না কী হচ্ছে। বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না... সে দেখেছে, অসবে ব্যথা-ট্যথা লাগে ন, পর্ন ছবির মেয়েগুলি কি সুন্দর উফ উফ করে। মেয়ে মানুষ হচ্ছে মাগীর দল, সব কিছুতেই মজা পায়, খালি একটু ঢং করে আর কি!

সে ফেসবুকে দেখেছে, মেয়ে মানুষ ৭/৮ বছর থেকেই বিয়ে দেয়া যোগ্য, তখন তারা যৌনতাও উপভোগ করে। সে ফেসবুকে দেখেছে, তার বন্ধু শেয়ার দিয়েছে... ফেসবুকে কত কিছু জানা যায়...

ধর্ষণের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার পূর্ণা ত্রিপুরা নামের সেই মেয়েটি। ছবি :সূত্র ইন্টারনেট

এবং তারপর...

উপরের গল্পটি যে সত্য হলেও হতে পারে, এটা সকলেই কমবেশি জানেন। পত্রিকার পাতা খুললে এমন সংবাদ আমরা রোজই দেখি। আজকের সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাটিও সকলেই জানেন। কি চমৎকার ভাবেই না স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েগুলিকে পিষে দিয়ে গেছে বাস। সেই ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। যারা দেখেছেন, তারা শিউড়ে উঠেছেন। আমার চোখের সামনেই কতজনে ভেঙে পড়েছেন কান্নায়। হয়তো মনে পড়ে গেছে যে এটাই তো শুরু নয়, আগেও হয়েছে। প্রতিনিয়ত হচ্ছে। হতে হতে সম্ভবত আমাদের দেহ আর মনে সয়ে গেছে। মনে আছে সেই ছেলেটির কথা, দুটি বাসের মধ্যেখানে পিষে যার হাতখানাই ছিঁড়ে গেল? কদিন বাদেই মর্মান্তিক মৃত্যু হল ভাগ্যহীন সেই তরুণের।

মনে নেই? তাহলে অল্প কিছুদিন আগের কথাই মনে করুন। এই তো কদিন আগেই হানিফের বাস থেকে ছিটকে পড়লো পায়েল নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। তাঁকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে বাস চালক ও হেল্পার কী করেছিল জানেন? ফেলে দিয়েছিল অতল পানিতে। আর পানিতে ফেলে দেয়ার আগে ভালো করে থেঁতলে দিয়েছিল মুখখানা, যেন আপনজনেরা চিনতেও না পারে! ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কী এসেছে জানেন? পায়েলকে যখন মুখ থেঁতলে পানিতে ফেলা হয়, ছেলেটি তখনও জীবিতই ছিল!

বাস চাপা পড়ে নিহত শিশুগুলোর কথা জানেন, তারা অনেকেই হয়তো দেখেছেন আরও একটি পাহাড়ি শিশু হত্যার সংবাদ। সেই ছবিগুলোও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। সত্যি কথা বলি, সেই ছবিগুলো দেখার পর আমি সারাদিন কেঁদেছি। এই যে এখন টাইপ করছি, একটু পর পর চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, ফোঁপানি বন্ধ করতে গিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এই কান্না যতটা বেশি দুঃখের, তার চাইতে অনেক বেশি যন্ত্রণা আর আতঙ্কের। এই টুকুন একটা দেহ... বিশ্বাস করুন এক টুকুন একটা দেহ। ৯ বছরের একটা দরিদ্র অপুষ্ট শিশুর দেহ-ই বা কতটুকুন হয়? সেই দেহটিকে তারা রেপ করেছে, তারপর দু হাত কেটে দিয়েছে, তারপর পায়ুপথে গাছের গুড়ি ঢুকিয়ে হত্যা করে রেখে গেছে!

আমি জানতে চাই কেন? কেন এই নৃশংসতা? কীসের কারণে? একটা ছোট্ট দেহের প্রতি এত কেন আক্রোশ এই হায়েনাদের? কেন?

পূর্ণা ত্রিপুরা নামের এই শিশুটি পড়তো চতুর্থ শ্রেণীতে। বাবা নেই, দরিদ্র পরিবারে মাকেই খেটে খেতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়ানো তথ্য অনুযায়ী গতকাল শনিবার দুপুরে মেয়েটিকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। রাস্তার পাশে বাড়ি, দুপুরে স্কুলের ফাঁকে বাড়িতে দুটো খেতে এসেছিল মেয়েটি, বাড়ির সকলে ছিল জুম চাষে ব্যস্ত। স্থানীয়রা বলেছে দুপুর ২ টার দিকে বাড়ির সামনে একটা ট্রাক থামে, ৩/৪ জন বাঙালিকে যেতে দেখা যায় বাড়ির দিকে। এরপর কেউ কিছু জানে না।

বিকেলে বাড়ি ফিরে মা আর খুঁজে পায়নি মেয়েটিকে। খুঁজতে খুঁজতে সেই লাশ মিলেছে রাত ১১ টার পর, বাড়ির কাছেই একটা ছড়ার ধারে। শিশু পূর্ণাকে কেবল ধর্ষণ করেই আশ মেটেনি হায়েনাদের। তারা ক্ষত-বিক্ষত করেছে এইটুকুন মেয়ের যোনি, কেটে দিয়েছে তাঁর দুটো হাত, তারপর পায়ুপথে ঢুকিয়ে দিয়েছে গাছের গুঁড়ি...

আচ্ছা, লোকগুলি কি তখন হাসছিল? ছোট্ট দেহটা যখন যন্ত্রণায় মোড়াচ্ছিল, তখন কি খুব আনন্দ হচ্ছিল তাদের? খুব আনন্দ? ধর্ষণ করে হত্যা করবে, এটা কি কম নৃশংস যে আরও নৃশংসতা চাই? আমার কেন যেন মনে হয় ধর্ষণের চাইতে এইখানে মুখ্য খুনটা, যৌনতার চাইতে এখানে মুখ্য একটা শিশুর দেহকে ভোগ করা। পয়সা দিয়ে যৌনতা কিনতে পাওয়া যায় সবখানেই। কিন্তু এটা কেবল যৌনতার আকাঙ্ক্ষায় খুন না। এই খুন আক্ষরিক অর্থেই শিকার করে মানুষ মারার আকাঙ্ক্ষায়। ছোট একটা শিশুকে নির্যাতন করে একটু একটু করে ভোগ করে তারপর বীভৎস ভাবে হত্যা করাতেই এদের অরগাজম। এবং আমার কেন যেন মনে হয়, এরা প্রত্যেকে মাদকাসক্ত। এই দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ঢুকে পড়েছে, ইয়াবা আর ফেন্সিডিল ঢুকে পড়েছে। সেই মাদক এখন মানুষের বদলে কথা বলে...

পরিশিষ্ট:

যারা এই ভয়াবহ কান্ড ঘটিয়েছে, তাদের পরিচয়ও উদ্ধার করা হয়েছে। পরিচয় ভেসে বেড়াচ্ছে অনলাইন নিউজ সাইটগুলোতে, ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্থানীয় সূত্র মতে এ নৃশংস কাজে যারা জড়িত তারা হল-

১। নয়ন হোসেন (২৬) ,বাড়িঃ মেরুং ২ নং হেডকোয়াটার , মহেন্দ্র ড্রাইভার।

২। নয়ন ইসলাম (২৮),বাড়িঃ মেরুং ২ নং হেডকোয়াটার, মাহেন্দ্র ড্রাইভার।

৩। বান্ডারি মোটর গাড়ি ড্রাইভার বাড়িঃ মেরুং ২ নং হেডকোয়াটার

৪। নজরুল ইসলাম(২৭) বাড়িঃ মধ্য বোয়ালখালি, মোটর গাড়ি চালক।

আমি শুধু জানতে চাই, পুলিশ কি এদের গ্রেফতার করবে? এদের কি ফাঁসির ব্যবস্থা হবে? নাকি তুচ্ছ একটা দ্বিতীয় শ্রেণীর গরীব শিশু ভেবে ভুলে যাবে তারা?

আমি এদের ফাঁসি চাই না। আমি চাই এদের যৌনাঙ্গ কর্তন করা হোক, চার হাত-পা কর্তন করা হোক, পায়ুপথে গাছের গুড়ি ঢুকিয়ে এদের হত্যা করা হোক। একবার না, বারবার হত্যা করা হোক। আমি চাই শিশুদেরকে চাপা দেয়া সেই বাস ড্রাইভারকে তার বাসের নিচেই পিষে ফেলা হোক। একবার না, বারবার পিষে ফেলা হোক। আর সেই দৃশ্য সমস্ত টেলিভিশনে লাইভ টেলিকাস্ট করা হোক, যেন এইসব ভাবনা যাদের মনেও আসে তাদের রুহ কেঁপে উঠে।

খুব নিষ্ঠুর শোনালো? খুব নিষ্ঠুর? তাহলে স্ক্রল করে উপরে যান, শিশুটির সাথে কী করা হয়েছে সেটা পড়ুন, সেই শিশুর স্থানে নিজের সন্তানকে কল্পনা করুন...

এবার কিছু বলতে চান?

লেখক: রুমানা বৈশাখী, কথাসাহিত্যিক