
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দক্ষিণ এশীয় অভিজ্ঞতা
নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি কৌতূহল বাড়ার কথা আমরা জানি। বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক ভাবাদর্শের বেলায় রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা তার প্রতি সহানুভূতি তৈরির পটভূমি হিসেবে কাজ করতে পারে।
নিষেধাজ্ঞার সময় সেই রাজনীতির সংগঠকেরা ক্রমে আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের ওপর নজর রাখা দুরূহ হয়। অপ্রত্যাশিত আদলে তাদের পুনরুত্থান ঘটার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় চরমপন্থারও জন্ম হয়। আবার রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা অনেক ভাবাদর্শের বিকাশের পথ রুদ্ধও করে দেয়। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কী রকম অবস্থা তৈরি করবে, সেটা দেখতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
তবে বাংলাদেশে বা আশপাশের অঞ্চলে ইতিমধ্যে অনুরূপ যেসব নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে আছে, তার ফল এ-ও জানাচ্ছে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করে কোনো নির্দিষ্ট ভাবাদর্শ বা রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখা বেশ দুরূহ।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কথা দিয়ে শুরু করা যায়। ১৫ বছর এ দল অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞাতুল্য পরিবেশে ছিল। এমনকি শেষতক আইনি ফরমানেও নিষিদ্ধ করা হয়। তার ফল কী দাঁড়িয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) কাহিনিতেও ঘুরে আসতে পারি।
২০২৫ সালে আরএসএসের ৯৯ বছর বয়স হলো। এই দলকে থামাতে সেক্যুলার সমাজ চারবার নিষেধাজ্ঞার নোটিশ জারি করেছিল। এসব নিষেধাজ্ঞার বড় বড় পটভূমিও ছিল। ১৯৪৮ সালে গান্ধীকে হত্যায় তাদের কর্মীদের যোগসাজশ ছিল এক দফা নিষেধাজ্ঞার কারণ। ১৯৯২ সালে তারা একই ঝামেলায় পড়ে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে। কিন্তু পুনঃপুন নিষেধাজ্ঞার পরও আরএসএসকে থামানো-দমানো যায়নি। দেশটির ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তাদের সহযোগী দল বিজেপি এখন শাসক। কেন্দ্রেও আছে পরপর তৃতীয় মেয়াদে।
ভারতের এই নজির জানাচ্ছে সমাজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি সমর্থনের অবশেষ থাকলে অপরাধমূলক কাজের পরও তাকে নিষিদ্ধ করে রাখা কঠিন। এর জন্য জনসমাজে নিবিড় সংলাপ দরকার। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের কাছে এসব আদর্শ ও অনুশীলনের উত্তম বিকল্প হাজির করার দীর্ঘ পরিক্রমা ছাড়া এদের পরাস্ত করার সংক্ষিপ্ত পথ নেই।
ভারতে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টিও ২০০৯ থেকে নিষিদ্ধ হয়ে আছে। কেবল নিষেধাজ্ঞাই নয়, ২১ বছর পুরোনো এই দলকে দেশের ‘প্রধান অভ্যন্তরীণ শত্রু’ আখ্যায়িত করে কংগ্রেস আমলে যে যুদ্ধ শুরু হয়, সেটা বিজেপি আমলে বাড়তি গতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ২৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন; কিন্তু অনেক রাজ্যে এই আদর্শবাদীদের এখনো বেশ ভালোমতো সক্রিয়তা ও প্রভাব আছে।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত আছে পাকিস্তানেও। পাঞ্জাবের টিএলপি বা তেহরিক–ই–লাব্বায়িককে সেখানকার সরকার ২০২১ সালে নিষিদ্ধ করে। পুলিশ হত্যার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ২০২১-এর আগে থেকে তাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলছিল। কিন্তু ২০২২ সালেই ‘ব্যান’ তুলে নিতে হয়। স্থানীয়ভাবে তাদের আবেদন এত বাড়তে শুরু করে যে প্রকাশ্যে কাজ করতে না দিয়ে উপায় ছিল না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনৈতিক দল
- নিষিদ্ধ
- আওয়ামী লীগ