
নির্বাচনের পথেই সমাধান
সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এর মধ্যে কোনো না কোনো ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিনই চলছে রাজপথে আন্দোলন। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে অস্থিরতা। আবার শেয়ারবাজারের অবস্থা চরম নাজুক, বিনিয়োগে স্থবিরতা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বলা যায়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানামুখী সংকট ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনকেই সংকট সমাধানের একমাত্র পথ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলো ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যেসব সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো নির্বাচিত সরকারের পক্ষে দ্রুত সমাধান দেওয়া সম্ভব। এজন্য দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিলে এ সংকট থাকবে না। রোডম্যাপ দিলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের ট্রেনে উঠে পড়বে। স্বাভাবিক হবে দেশের পরিস্থিতি। কিন্তু নির্বাচন যত দেরি হবে দেশ ও গণতন্ত্র তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত নির্বাচনের পথে হাঁটা উচিত বলে মনে করেন তারা।
তিন দফা দাবিতে রাজধানীতে ৪ দিন ধরে বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে টানা ৩ দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তাল। কুয়েটসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো অস্থিরতা কাটেনি। রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শনিবার সংবাদ সম্মেলন করবে। এর মধ্যে বিভিন্ন দাবিতে ডিপ্লোমা নার্সসহ কয়েকটি সংগঠনও আন্দোলন করেছে। গত দুদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনের সামনেও চলেছে অবরোধ। কয়েকদিন ধরে এসব আন্দোলনের কারণে ঢাকা একরকম দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে। আর বিভিন্ন ইস্যুতে থেমে থেমে চলে ‘মব জাস্টিস’। এছাড়া দুর্নীতিবাজ-আওয়ামী দোসর নিয়োগ নিষিদ্ধ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, বিতর্কিত পদোন্নতি প্রক্রিয়া রিভিউসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রশাসনেও চলছে অস্থিরতা। মানবিক করিডর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি, কলকারখানায় গ্যাস সংকটসহ নানা সেক্টরে সমস্যা বিদ্যমান। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা বাংলাভাষীদের জোরপূর্বক ঠেলে (পুশইন) দিচ্ছে বিএসএফ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা গতানুগতিক নির্বাচিত সরকারের মতো নয়। সুতরাং মানবিক করিডরের কথা বলেন বা আরও যে অনেক দাবিতে আন্দোলন করছে, এসব দাবি পূরণের জন্য তারা যথার্থ কিনা তা আগে সরকারকে নিজ থেকেই বলতে হবে। সরকার সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। দৈনন্দিন অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু সরকার মনোযোগ দিচ্ছে অসংখ্য কাজের মধ্যে, যেগুলো তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না, যা প্রয়োজন নেই। সরকারের উচিত ছিল সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা জায়গায় ঐকমত্য করানো। সেই কাজের তো কোনো খবর নেই। এতে করে আমাদের দেশের বড় ক্ষতি হচ্ছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কিন্তু সংকট উত্তরণের জন্য জনগণ নিয়ে এসেছে, এখন সরকার যদি সংকটে ফেলে দেয় তাহলে আমরা জাতি হিসাবে দুর্ভাগা।