
সমস্যা কি পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকা নাকি হুকুমের
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কোন ধরনের অস্ত্র বা সরঞ্জাম ব্যবহার করবে, সেই বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নির্ধারিত। অর্থাৎ পুলিশ চাইলেই তার ইচ্ছেমতো যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। তবে পুলিশের এসব অস্ত্র ব্যবহারে নির্দেশনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জাতিসংঘের ‘আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মৌলিক নীতিমালা (১৯৯০)’ এবং ‘কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশিকা (২০২০)’।
এসব নীতিমালায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকে শেষ বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এবং প্রতিটি বলপ্রয়োগের ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও তদন্তের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এসব আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চলতে হয়। বাংলাদেশে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি, ফৌজদারি আইন, পুলিশ অ্যাক্ট ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল দ্বারা সুস্পষ্ট নির্ধারিত।
এ কারণে বলপ্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বেচ্ছাধীন নয়, বরং দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত ও অনুমোদিত। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের কাছে ‘মারণাস্ত্র’ (পড়ুন প্রাণঘাতী) থাকা না–থাকা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে দুই ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হলো, পুলিশের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা না–থাকার প্রশ্ন কেন আসছে। কারণ, গত জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের শরীরে ৭.৬২ এমএম ক্যালিবারের গুলি পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশে এসব গুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চীনের তৈরি টাইপ ৫৬ অ্যাসল্ট রাইফেলে ব্যবহার করা হয়। শুধু তা–ই নয়, এটি বিশ্বের অন্যতম বেশি ব্যবহৃত এবং ছড়িয়ে পড়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর একটি।
তবে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারি বাহিনীগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অস্ত্র ব্যবহার করে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো এর থেকে আরও বেশি কার্যকর অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। উন্নত দেশগুলো নিয়মিত পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে একই সঙ্গে লিথ্যাল ও নন-লিথ্যাল শর্ট আর্মস বা হ্যান্ডগান ব্যবহার করে।
অন্যদিকে বিশেষ অভিযান বা বিশেষ পরিস্থিতিতে লং ব্যারেল অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। আপনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল কিংবা চীনের মতো দেশগুলোর প্রত্যেক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের কাছে লেস-লিথ্যাল উইপন যেমন লাঠি, পেপার স্প্রে, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার টিজার, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, ফ্ল্যাশব্যাগ গ্রেনেড ও হ্যান্ডকাফ থাকে। একই সঙ্গে লিথ্যাল উইপন সাইড আর্মস হিসেবে এক বা একাধিক পিস্তল রাখে, যাতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার করতে পারেন।