চারপাশ থেকে উপহাসের প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। একবার মাথা তুলে সত্য তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করেছিল উপহাসের তাণ্ডবনৃত্য। তবু সব কটাক্ষ উপেক্ষা করে মগ্ন হয়ে কাজই করছিল সে।
সত্যকে থামাতে না পেরে অধৈর্য হয়ে বেপরোয়া উপহাস হিংস্র কণ্ঠে বলল, ' কী সব আজেবাজে কাজ করছো? এসব আবর্জনা তৈরি করে কি মূল্যবান পাহাড় গড়বে? কী সাফল্য পাবে? সময় নষ্ট করছো কেন? বরং আয়-রোজগারে মন দাও, ভবিষ্যৎ ভালো হবে।'
আবারও মাথা তুলে তাকাল সত্য। দেখার চেষ্টা করল উপহাসের সাফল্যের পাহাড়। কিছুই চোখে পড়ল না। তবে দেখল তার বিকৃত চোখ-মুখ আর চাউনিতে ভেসে থাকা জিঘাংসার স্পষ্ট চিহ্ন। যার নিজেরই সাফল্য নেই, নেই বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ সে-ই কি না পরামর্শ দিচ্ছে অন্যের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য! ভাবনার আড়াল থেকে মৃদু হাসির রেখা ভেসে উঠল সত্যের মুখে।
অন্তর জ্বালা বেড়ে গেল উপহাসের। সামনে থেকে সরে গিয়ে হাজির হলো গীবতের কাছে।
'কী বন্ধু, কেমন আছো? আজ কী শোনাবে?'
'আমাকে বন্ধু ভাবছো দেখে ভালো লাগল। কিছু শোনাতে আসিনি আজ। কেবল বলতে এসেছি ঘাড়ত্যাড়া সত্যের ফালতু কাজ দেখে পিত্তি জ্বলে যায়। আমার কোনো পরামর্শই সে পাত্তা দেয় না, কোনো কথা শুনতে চায় না।'
'ফালতুরা তো ফালতু কথাই বলবে। তো কীভাবে বুঝলে যে ফালতু কাজ করছে সে?'
'তার আনস্মার্ট কথাবার্তা শুনে সব বোঝা যায় আর তার লেখা দুই একটা শব্দ বা বাক্য পড়লেই বোঝা যায় লেখালেখির কিছুই জানে না অথচ আজেবাজে সব অখাদ্য লেখে।'
'ঠিক আছে। মাল-মশলা পেয়ে গেলাম। আমাকে সুস্বাদু খাবার উপহার দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তবু জানতে চাই, সে যা লিখছে, যাকে তুমি অখাদ্য বলছো, সে-বিষয়ে তোমার জানা আছে তো, নলেজ আছে তো?'
'আরে বলো কী? আমি তো বিশ্বসাহিত্যের হাজার হাজার বই পড়ে ফেলেছি, এদেশের এবং ভারতের সবার বই পড়া শেষ। লেখার স্ট্যান্ডার্ড আমি বুঝবো না? ফালতু, ফালতু সব ফালতু।'
গীবতের কাছে সব ঝেড়ে দিয়ে এসেও শান্ত হচ্ছে না উপহাসের ভেতরটা। আবার এলো সত্যের কাছে। এখনো মগ্ন হয়ে কাজ করছে সে। দৃশ্যটা দেখে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে চলে গেল ঘরের বিদ্যুৎ বোর্ডের কাছে। সুইচটা অফ করে দিল। সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার জেগে উঠল। থেমে গেল সত্যের কাজ। কিন্তু আপন কাজের মগ্নতার বাইরে এসে সে আবিষ্কার করল আরেক সত্যের রোশনি জেগে উঠেছে আঁধার ঘরে। তা অন্ধকারেই জ্বালিয়ে দিল অন্য আলো। সত্য স্পষ্ট দেখতে পেল এক জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্বকে।