ছবি সংগৃহীত

মরণব্যধির সংকেত হতে পারে মুখে ঘা!

ফজলুল করিম রনি
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৩, ১৭:৪৭
আপডেট: ১৩ মে ২০১৩, ১৭:৪৭

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী দেখা যায়, প্রায় দুইশ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখগহ্বরে ঘা এর মাধ্যমে। বর্তমান কালের মরণঘাতী রোগ এইডস থেকে শুরু করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এমনকি গর্ভাবস্থায়ও অনেক রোগের লক্ষণ মুখের ভেতরেই প্রকাশ পায়। মুখের ভেতরের মাংসে বা জিহ্বায় ঘা হয়, ব্যথা করতে থাকে, কিছু খেতে গেলে জ্বলে... মোটামুটি এগুলোই হচ্ছে মুখে ঘা এর প্রাথমিক লক্ষণ। অনেকেরই এসবের সাথে সাথে মুখ ফুলে যেতে পারে, পুঁজও বের হতে পারে। সাধারণত মুখে গালের ভেতরের অংশে বা জিহবায় ঘা হয় কোনও কারণে কেটেছড়ে গেলে। আবার শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলেও এ সমস্যা দেখা দেয় অনেকেরর। খুব গরম পানীয় পান করলে বা কিছু চিবাতে গিয়ে গালের ভেতরে কামড় লাগলেও এ ঘা হতে পারে। এইসব সাধারণ কারণ ছাড়া মুখের এই ঘা নানা মরনব্যধির কারণে হতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রিউমেটিক ফিভার, রক্তস্বল্পতা, ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি। যাদের ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ আছে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং দীর্ঘদিন ওষুধ গ্রহন করছেন তাদের মুখেও এক ধরনের জীবাণু বিস্তার লাভ করে থাকে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যাদের ধূমপান এবং জর্দা দিয়ে পান ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের মধ্যে মুখের ঘা খুব বেশি হয় এবং সেই সঙ্গে মুখে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। বিশেষত যারা পানের সঙ্গে জর্দা খান এবং অনেকবার পান খান তাদের মুখের ঘা বেশি থাকে। সাধারণ ক্ষেত্রে আয়রন বা ভিটামিন বি১২-এর অভাবেই এ সমস্যা বেশি হয়। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুব জরুরি। যেমন- ফল, শাকসবজি, দুধ, মাছ এবং চর্বি ছাড়া মাংস। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ জিঙ্ক, ভিটামিন ও আয়রন থাকায় মুখের ঘা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাথে নিয়মিত মাউথ ওয়াশ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। রিবোফ্লাভিন জাতীয় ট্যাবলেট চুষে খেলে ঘায়ে উপশম হয়। ব্যথা বেশি হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। এক ধরনের মুখে মাখার ক্রিম বা জেলও ব্যবহার করা যায়। তবে যেটাই করুন না কেন, সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। খুব স্পর্শকাতর অংশ এই মুখ, নিজে নিজে ওষুধ ব্যবহার করতে যাবেন না। সব চাইতে জরুরি ব্যাপার হলো চিকিৎসার পরও মুখের ঘা যদি দু’সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই বায়োপসী অথবা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ মুখে অনেক ঘা বা সাদা ক্ষতগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন প্রি-ক্যান্সার লিশন বা ক্যান্সারের পূর্বাবস্থার ক্ষত। সুতরাং মুখের ঘা প্রতিরোধে দাঁত ও মুখের যত্ন নেবেন এবং ঘা দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবেন।