
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে এখন আমরা কী নির্মাণ করছি?
দমন-পীড়নকারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোর পর আমাদের উচিত ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানো, দেশে সৎ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা স্থাপন করা, স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা, দুর্নীতিমুক্ত ও দক্ষ আমলাতন্ত্র গঠন করা এবং এমন আরও অনেক পরিবর্তন আনা।
কিন্তু, আমরা কি তা করছি?
আমরা শেখ হাসিনার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলাম—কারণ, যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই গণতন্ত্রকেই তিনি ধ্বংস করেছেন। আমরা হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম তার অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। তিনি এ দেশের মানুষের বিশ্বাস পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং জনগণের কোনো মূল্যই তার কাছে ছিল না। দুর্নীতির এক মহাপ্রাচীর তার দলকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলেছিল। যার ফলশ্রুতিতে জনগণের কথা তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার কথা শোনার পরিবর্তে তাদের ওপর গুলি চালিয়ে তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন—যেখানে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নিহত হয়েছেন অন্তত এক হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজারো মানুষ।
সবমিলিয়ে এক কথায় বলা যায়, হাসিনার পতনের কারণ ছিল গণতন্ত্র ধ্বংস করা।
প্রশ্ন হলো, সম্প্রতি কি বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটেছে যার কারণে আমাদের এই বিশ্বাস জোরদার হবে যে, আমরা গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছি? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, জোর খাটিয়ে, সরকারকে হুমকি দিয়ে, আল্টিমেটাম দিয়ে এবং আরও বিভিন্ন উপায়ে সরকারকে নতিস্বীকারে যারা বাধ্য করছে, তাদের কথা বাদ দিলে বর্তমান শাসন প্রক্রিয়ায় এমন কোনো কিছু কি রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের মতামত প্রতিফলিত হচ্ছে?
আবারও বলছি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে দমন-পীড়নকারী হাসিনা সরকারকে আমরা সফলভাবে হটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সেই জায়গায় কী এনেছি? গণতন্ত্র আমাদের মূল লক্ষ্য বলে আজ আর মনে হচ্ছে না। কারণ, তেমনটা হলে আমরা কি নির্বাচন নিয়ে আরও বেশি আলোচনা করতাম না?
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবারই নির্বাচনের সম্ভব্য সময়সীমা বলছেন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে। শুরু থেকেই তিনি এটা বলছেন। যদি তার মনে হয় জুনে নির্বাচন আয়োজন করা ভালো হবে, তাহলে সেটিই স্পষ্ট করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া উচিত। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে এই অহেতুক বিতর্কের এখন অবসান হওয়া উচিত। কেননা, এই বিতর্কের কারণে সেই মানুষটার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, যাকে আমরা শ্রদ্ধা করি, যার ওপর ভরসা করি। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশেষ করে তখন, যখন এটা পরিষ্কার যে তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য ক্ষমতায় আরও সময় থাকতে চায় এবং সেজন্যই সংস্কারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচন পেছাতে চাইছে।
তাদের মন্ত্রণালয়গুলোর দিকে নজর দিলে সেখানে কি কোনো সংস্কার দেখা যাচ্ছে? সেখানকার কার্যক্রমে সামান্যতম কোনো পরিবর্তন এসেছে? কিংবা সেসব মন্ত্রণালয়ে সংস্কার বা পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় কোনো প্রস্তাব গিয়েছে?