ছবি সংগৃহীত

ঐতিহ্যবাহী ঘটচিত্র

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০১৩, ১২:২৬
আপডেট: ২৯ জুন ২০১৩, ১২:২৬

সাধারণত ঘট বলতে বোঝায় ছোট মাটির কলস। কুমার কাঁচা মাটি দিয়ে হাতের কৌশলে বিভিন্ন গড়নের কলস তৈরি করেন এবং পরে সেগুলো পুড়িয়ে নেন। কাঁচা অবস্থায় এসব ছোট কলসের গায়ে বাঁশের ছিলকা বা কাঠি দিয়ে নানা ধরনের নকশা করা হয়। অনেকটা কাঁসা বা পিতলের কলস বা থালাবাসনের মতো। খোদাই করা নকশা ছাড়াও রং-তুলি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন চিত্রে কলসের গলা ও গা চিত্রিত করা হয়। পুষ্পিত লতা ও রৈখিক কারুকাজ ঘটে বেশি নজরে পড়ে। কলসের গায়ে ধর্মীয় চিত্র বা চিহ্নও আঁকা হয়ে থাকে। সাধারণত নিত্য ব্যবহারের কলসের গায়ে কেউ ধর্মের ছবি আঁকে না। বিয়ে, পূজার মণ্ডপ সাজাতে অথবা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজাতে ফুল-ফল-পাতাসহ 'দ্বারঘট' ও 'মঙ্গলঘট' ব্যবহৃত হয়। এসব ঘটে পিটালি, তেল-সিঁদুর দিয়ে আলপনা করা হয়। মঙ্গলঘটে সাধারণত স্বস্তিকা বা মাঙ্গলিক চিহ্নের আলপনা করা হয়। ঘর সাজাবার জন্যও ছোট ছোট ঘট ব্যবহার করা হয়। এসব শৌখিন ঘটে স্থায়ী রং দিয়ে লতাপাতা ও অন্যান্য নকশা করা হয়। গ্রাম্য মেলাতে এসব শৌখিন ঘট কিনতে পাওয়া যায়। হিন্দু বিয়েতে ঘট একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস। বিয়ের রীতি অনুযায়ী এসব ঘটে রাখা হয় চাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে আঁকা হয় স্বস্তিকা।

কিছু ঘট আছে যা বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। এগুলোর গড়ন এবং নকশায় থাকে ধর্মীয় প্রভাব। যেমন মনসার ঘট। 'মনসার ঘট' এদেশে বহুল প্রচলিত একটি নাম। প্রতিমার বদলে মনসাদেবীর প্রতীক হিসেবে ওই ঘটকেই পূজা করা হয়। ধর্মপূজার প্রতীকপাটে কোনো মূর্তি থাকে না। কিন্তু মনসার ঘট শুধুমাত্র প্রতীক নয়, এর পুরো অবয়বটাই মূর্তিমান। অর্থাত্‍ ঘটটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, এর গলা, মাথা, পেট বরাবর প্রতীকমূর্তি অথবা প্রতিমামূর্তি ফুটে ওঠে। ঘটে ফুটে ওঠা অবয়বকে বাস্তব চেহারা ও প্রত্যক্ষতা দেয়ার জন্য রং ব্যবহার করা হয়। চোখ, নাক, চুল, ফণা ইত্যাদি রং দিয়ে আঁকা হয়। এক বা একাধিক সর্প ফণাযুক্ত ঘটকে পূর্ববঙ্গে 'নাগঘট' বলে। আটটি সাপের ফণাযুক্ত ঘটের নাম 'অষ্টনাগ ঘট', বাঁশের চোঙাকৃতির নাগঘটকে 'কৈতরিঘট'ও বলা হয়। ময়মনসিংহ গীতিকায় মনসার ঘট বোঝাতে 'ভরক' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে মনসাঘট 'বারা' নামে পরিচিত। সর্পরূপী মনসাপূজা অর্থাত্‍ প্রাণিপূজা অনার্য ধর্মাচারের সাথে জড়িত। মনসা ছাড়া 'ঘটলক্ষ্মী'র পূজাও বাংলাদেশে প্রচলিত আছে। ধানের ছড়া ভরা ও ছবি আঁকা ঘটের পূজাই হলো ঘটলক্ষ্মীর পূজা। প্রাচীন ঘটলক্ষ্মীর পূজার মাধ্যমেই পৌরাণিক দেবী লক্ষ্মী মানবমূর্তিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। পূজার উদ্দেশ্য নিয়ে আরো নানা ধরনের ঘট তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন দক্ষিণরায়ের মুণ্ডমূর্তিসহ ঘট আছে, একে 'দক্ষিণরায়ের বারা' বলে। ধর্মদেবতার ঘটে সূর্যের আলপনা করা হয়। দেবতা কার্তিকের ঘটেও নানা রকম আলপনা থাকে, একে বলা হয় 'কার্তিকের ভাঁড়'। মূলত, দেবঘটগুলো হিন্দু লোক-সংস্কৃতির অঙ্গ। চিত্র- ফ্লিকার ডট কম